পরিবারে একজন নবজাতকের আগমন সব সময়ই আনন্দের। তবে অনেক সময় সেই নবজাতকের জন্মগ্রহণের আনন্দে ভাটা পড়ে তার শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে। সব নবজাতকই যে পুরোপুরি সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করে—তা কিন্তু নয়। আর নানারকম সমস্যা নিয়ে জন্মানো নবজাতকদের শেষ আশ্রয় হয়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেলের শিশু বিভাগ। এই বিভাগের চিকিৎসকরা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন এই নবজাতকদের। তেমনই একজন মানবিক চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিওনেটাল সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলুর শিক্ষাজীবনের শুরু মোহাম্মদপুর গভ. স্কুলে। ১৯৮০ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ১৯৮২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা মেডিক্যালের অধীনে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। এরপর সেখানেই শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেছেন এবং সেইসঙ্গে সম্পন্ন করেছেন এক বছর মেয়াদি ট্রেনিং সেশন। এরপর ১৯৯৩ সালে ১১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। নানা অর্জন আর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে ২০০১ তিনি সহ-রেজিস্ট্রার হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন।
অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু মাত্র ৬ জন পদ-বিশিষ্ট বিভাগে কাজ করা শুরু করেছিলেন। শিশুদের চিকিৎসা সেবার জন্য ছিল হাতেগোনা ১৩টি বেড। স্বল্প ধারণক্ষমতা আর চিকিৎসাঁসেবার সুযোগ থাকলেও লক্ষ্য ছিল আকাশচুম্বী। শিশু মৃত্যুর উচ্চহার থেকে কমিয়ে আনতে হবে ১০-২০ শতাংশে। আর দীর্ঘ ২০ বছরের কর্মজীবনে সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছেন ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ একদিকে যেমন বেড়েছে বেড সংখ্যা আর চিকিৎসাসেবার মান, তেমনি কমিয়ে এনেছেন নবজাতক মৃত্যুর হার।
মানবিক চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন ভালো শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য তিনি যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ECFMG-এর প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (ফাইমার) অধীনে প্রথম বাংলাদেশি মেডিকেল শিক্ষক হিসেবে ফেলোশিপ অর্জন করেন।
পাশাপাশি চিকিৎসাক্ষেত্রে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কোর্স মাস্টার্স ইন মেডিকেল এডুকেশন সম্পন্ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ২০০৪ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ৬ মাসব্যাপী ট্রেনিং ফেলোশিপ, ভারতের হান্ধী ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ থেকে পেডিয়াট্রিক ল্যাপারোস্কপিকে ট্রেনিং এবং জাপানের বিখ্যাত ওসাকা মেডিক্যাল সেন্টার ফভ মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ থেকেও নিওনেটাল সার্জারিতে ফেলো হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
চিকিৎসা আর শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন সুসংগঠক হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। শিশু সার্জনদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক সার্জনস অব বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন গত সাত বছর ধরে। সফল এই চিকিৎসক তার কাজের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০১৯ সালে ভারতের নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস মেডিকেল কলেজ থেকে ওরাটর (Orator) পুরস্কার লাভ করেন তিনি। তার লেখা সায়েন্টেফিক পেপার ‘প্রাথমিক পর্যায়ে অ্যাপেনডক্স হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হয় না, ওষুধে ভালো হয়’— উপস্থাপনের জন্য এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক সার্জনস এবং জাপানিজ সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক সার্জনস তাকে একাধিকবার পুরস্কৃত করে।