দেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকলেও নতুন পরিস্থিতিতে দূরত্ব ঘোচার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ সব ইসলামী দল একই ব্যালটে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রত্যাশাও তাদের।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বরিশালের চরমোনাই মাদরাসায় ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
এসময় আগামী নির্বাচনে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ সব ইসলামী দল একই ব্যালটে নির্বাচনের প্রত্যাশা করে বলে জানান দুদলের শীর্ষ ২ নেতা।
পরে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন দুদলের আমির। এ সময় একই মঞ্চে পাশাপাশি বসে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তারা।
উঠে আসে আগামী নির্বাচন ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিষয়ে তাদের মতামত। জামায়াতের আমির বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। যৌক্তিক সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চান তারা।’
বরিশালে চরমোনাই দরবারে মঙ্গলবার দুপুরে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ইসলামী আন্দোলনের একটি ভালো ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।’
এ সময় আগামী নির্বাচনে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলো একই ব্যালটে নির্বাচনের প্রত্যাশা করে বলে জানানো হয়।
পরে ইসলামী যুব আন্দোলনের বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি এইচ এম সানাউল্লাহ বলেন, রাজনীতিতে দুই দল এত দিন পরস্পরবিরোধী থাকলেও এখন অনেক বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করছে। এটা দুই দলের ঐক্যের সূচনা পর্ব বলতে পারেন। এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রথম জামায়াতের কোনো আমির চরমোনাই পীরের দরবারে এলেন এবং দলীয় প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিলেন।
জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে এদিন সকালে বরিশাল আসেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। বিকালে কর্মী সম্মেলনে যোগদানের আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বরিশাল সদরে চরমোনাই পীরের দরবারে যান। সেখানে তিনি মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা রাজনৈতিক নানা বিষয়ে কথা বলেন। পরে দুই দলের নেতা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
ইসলামী দলগুলোর ঐক্য বা জোট হচ্ছে কি না, প্রশ্নের জবাবে দুই দলের আমির ঐক্যের জন্য জনসাধারণের কাছে দোয়া চান। তারা বলেন, ইসলামী দলগুলো ভোটকেন্দ্রে একটি বাক্স পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা মূলত ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দেখতে চাই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন হতে দেব না। দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে শতকরা ৯১ জন নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বাকি ৯ ভাগের মধ্যে কিছু ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। সব মিলিয়ে, এই বাংলাদেশ আমাদের। আমাদের মিলনমেলা আল্লাহর জন্য। এই মিলন রাজনীতির মাঠেও থাকবে। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। জনগণের প্রত্যাশা, নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ইসলামি দলগুলোর যেন একটি বাক্স থাকে।’
ভারত ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির বলেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী। আমরা ভারতের কাছ থেকে আশা করি, কাঁটাতারের বেড়া যেন না থাকে। এটি আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে হয়েছে।’ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই দ্রব্যমূল্য দ্রুত কমে আসুক। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ইসলামের পক্ষে একটি বাক্স কেন্দ্রে পাঠানোর প্রচেষ্টা আগেও ছিল, এখনো চলছে। বিভিন্ন কৌশলে গত ৫৩ বছর ইসলামি দলগুলোকে দূরে রাখা হয়েছে। ৫ আগস্ট নতুন স্বাধীনতার মাধ্যমে ইসলামি পক্ষের জন্য একটি ভালো ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তবে যদি আমরা সময়োপযোগী বিচার না করি, তা আমাদের জন্য অকল্যাণকর হতে পারে।’