ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে এক ব্যাগ রক্ত চুরির সময় ধরা পড়েছেন দুই ব্যক্তি। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকালে তাদের পুলিশ হেফাজতে নিলে মেলে ভিন্ন তথ্য।
গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছেন, তারা একটি চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে রক্ত চুরি করেন। প্রতি ব্যাগ রক্তে স্যালাইনের সঙ্গে মিশিয়ে তিন ব্যাগ বানিয়ে বিক্রি করেন। এ ছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের থেকে তাঁরা রক্ত সংগ্রহ করে বিক্রি করেন।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন মো. নাঈম খান (৩৮) ও মো. আবদুল্লাহ ওরফে তুষার চন্দ্র দে (২২)। নাঈম খান তারাকান্দা উপজেলার গোয়াইলকান্দি গ্রামের আবদুর রহমান খানের ছেলে এবং তুষার চন্দ্র আকুয়া মোড়ল বাড়ি এলাকার মিন্টু চন্দ্র দের ছেলে। তাঁদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মো. সেলিম মিয়া গতকাল শনিবার রাতে মামলা করেছেন।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপরে বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করে ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, গ্রেপ্তারের পর তারা জানান, বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে রক্ত সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। তারা বড় চক্রের সঙ্গে জড়িত। নগরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে মানুষের ক্ষতি করছেন। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে, এমন ব্যক্তিদের রক্ত সংগ্রহ করে, সরকার অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত না নিয়ে তাঁরা ভুয়া ব্লাড ব্যাংকের কথা বলে এসব রক্ত বিক্রি করেন।
ওসি আরও বলেন, ‘আপাতত চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি, বাকিদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের রক্ত বিক্রি করার কোনো বৈধতা নেই। কিছু ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টারের রসিদ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে শুধু উল্লেখ করা চরপাড়া, তাতে কোনো সঠিক ঠিকানা ও ফোন নম্বর নেই।
ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ফয়সল আহমেদ বলেন, ‘চক্রের তৎপরতা সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল না। ময়মনসিংহ নগরে নিবন্ধিত চারটি ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার রয়েছে। এসব সেন্টারের বাইরে থেকে যদি কেউ রক্ত নিয়ে যায়, তাহলে সেই রক্ত রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো উচিত নয়। কারণ, রোগী ভালো হওয়ার জন্য রক্ত দিতে গিয়ে এইডস, হেপাটাইটিস-বিসহ বিভিন্ন মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।’
ফয়সল আহমেদ আরও বলেন, অনিরাপদ রক্ত নেওয়ার কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে বেশি সচেতন হতে হবে, তারা সচেতন হলেই এ সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে। বিষয়টি নজরে আসার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।