অনেকটাই প্রচারবিমুখ তিনি। কাজ করে যান মানুষের কল্যাণে। ফটোসেশনেও উৎসাহী নন। যেখানে সবাই ভাইরাল হওয়ার জন্য ছুটছেন,সেখানে বিপরীত হাওয়ায় ছুটে চলেছেন একজন মানুষ। নিজেকে ব্যস্ত রাখেন মানবসেবায়। নিজেকে ফোকাস না করলেও সাধারন মানুষের কাছে তিনি একজন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে তিনি একজন আস্থার প্রতীক,ভরসার কেন্দ্র। তিনি হলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা । জেলার উন্নয়নে যিনি রেখে যাচ্ছেন অনন্য অবদান। সাধারন মানুষের কাতারে এসে যিনি জয় করেছেন সবার মন। তাইতো জেলার ছোট থেকে বৃদ্ধ, সবাই তার ভক্ত।
প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলার আর্থ-সামাজিক সম্ভাবনা যেমন অধিক, তেমনি সমস্যাগুলোও বেশ জটিল। স্বাধীনতার পর থেকেই যেন এই জেলার মানুষ অবহেলিত হয়ে আসছে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এখানে তুলনামূলক উন্নয়ন হয়নি। অনেক কিছুতেই নারায়ণগঞ্জ জেলা অন্যান্য জেলা থেকে পিছিয়ে। যদিও সরকারি রাজস্ব সংগ্রহে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা অন্যতম। তবে অনেক দেরিতে হলেও অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক,সামাজিক, এমনকি সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে এই ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ জেলায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলায় জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদানের পরপরই দুর্বার গতিতে সকল দপ্তরের কার্যক্রম সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ দিয়ে কাজ করে চলেছেন নারায়ণগঞ্জর মানবিক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তিনি যোগদানের পরপরই সকল দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জনগণের সেবা করার মন-মানসিকতা নিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে এবং সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ দিয়ে জনকল্যাণ সহ রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। যার সুফল সকল ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জবাসী ভোগ করছে।
জনকল্যাণমুলক কার্যক্রম
জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পরিষ্কার, সবুজায়ন, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, শহরকে যানজটমুক্ত করতে ও জনকল্যাণমুলক কার্যক্রমে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়নের কার্যক্রম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করে চলছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির আওতায় নগরকে ঢেলে সাজাচ্ছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ হবে সবুজে ঘেরা প্রাচ্যের ডান্ডি হবে বিশ্বসেরা। তার ওই আলোকে নারায়ণগঞ্জে এক লক্ষ বৃক্ষ রোপণ করেছেন। তার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন ও বৃক্ষ রোপনের উদ্বুদ্ধ হয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপন করেন। ইট পাথরের নগরীকে সবুজে ঢেকে দিয়েছেন।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির উদ্বোধনে করেন। তবে প্রচলিত নিয়মে ফটোসেশনে যাননি। বরং নিজেই শহরের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ কর্মসূচির ক্যাপ মাথায়, হাতে হ্যান্ডগ্লাভস পরে ডিসি হাসপাতালের বিভিন্ন বর্জ্য, এমনকি ইনজেকশনের সিরিঞ্জও হাতে তুলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলেন। হাসপাতালের বিভিন্ন কোণে রোগীদের ফেলে যাওয়া ডাবের খোসাও তার নজর এড়ায়নি। ডিসির এমন সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখে সঙ্গে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিস্মিত হন।
এর আগে গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে সাপ্তাহিক ‘ক্লিনিং ডে’ উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
এই কর্মসূচির আওতায় নারায়ণগঞ্জের সব উপজেলা হাসপাতালে সপ্তাহে একদিন করে ক্লিনিং ডে পালন করা হবে। ধাপে ধাপে জেলার সব সরকারি হাসপাতালেও এই কার্যক্রম চালু করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, “আমরা সরকারি হাসপাতালকে মানুষের আস্থার জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। অসহায় মুহূর্তে মানুষের একমাত্র আশ্রয় সরকারি হাসপাতাল। তাই এই জায়গাকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে; আমরা এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চাই।”
তিনি আরও বলেন, “পরিবর্তন আমাদের নিজেদেরকেই আনতে হবে। কারণ নোংরা আমরাই করি। তাই দোষারোপ নয়, নিজেরাই পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে। জেলার সব উপজেলা হাসপাতাল ও সরকারি অফিসে নিয়মিত ক্লিনিং ডে পালন করা হবে, যাতে মানুষ আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা ফিরে পায়।”
পরিবেশ পুনর্গঠন কর্মসূচি
গত ১১ মার্চ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক ঘোষণা দেন ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’ নামে একটি ব্যাপক পরিবেশ পুনর্গঠন কর্মসূচির। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে চাষাড়া লিংক রোড পর্যন্ত ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও প্লাকার্ড অপসারণ করা হয়। ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে এই কার্যক্রম, যা এখনো চলমান। ‘নারায়ণগঞ্জ হবে সবুজে ঘেরা, প্রাচ্যের ড্যান্ডি হবে বিশ্বসেরা’ স্লোগানে শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জকে সবুজে ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনায় দুই মাসের মধ্যেই জেলায় এক লাখ বৃক্ষরোপণ করা হয়। সবুজায়নের এই উৎসব চলে উপজেলা গুলোতেও। জেলার পাঁচটি উপজেলা, ৩৯টি ইউনিয়ন, পাঁচটি পৌরসভা এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালিত হয়।
১১৭টি নির্ধারিত স্পট, ৪২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ৩১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৮০.৩ কিলোমিটার সড়ক এবং চার কিলোমিটার খালপাড়ে বৃক্ষরোপণ করা হয়। দেশি-বিদেশি ৪৮টি প্রজাতির গাছের মধ্যে রয়েছে চেরি, পিংক ট্রাম্পেট, জাকারান্ডা, ফক্সটেল পাম, গ্লোরিয়া সিরিয়া ও রেইন ট্রি।
প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার কর্মসূচি
পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশকে পুনরুদ্ধার করতে সিটি করপোরেশনের বাইরে ফতুল্লা সদর উপজেলার প্রতিটি ওয়ার্ডে দুটি করে ওয়েস্ট বিন স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেন জেলা প্রশাসক। এরইমধ্যে এ কর্মসূচির আওতায় ১০০টি ওয়েস্ট বিন স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে।
জলাবদ্ধতা নিরসন
নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রায় ৯২ কিলোমিটার খাল রয়েছে, যার ১৭ কিলোমিটার অবৈধ দখলসহ ময়লা আবর্জনা ও নানা কারণে একেবারে ব্লক হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ ছিল। যে কারণে ড্রেনের পানি পাছ না হওয়ায় ও বৃষ্টি হলেই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা প্রায় সময়ই জলাবদ্ধ থাকতো। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় খাল পরিষ্কার, সংস্কার ও উদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জেলা সদরের কাশিপুর ইউনিয়নের কল্যানী খাল, ফতুল্লার ওয়াবদারপুল খাল, লালপুর এলাকার ড্রেন ও নালা পরিষ্কার, জালকুড়ির জলাশয়ে কচুরিপানা ও আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে।
কংস খাল, ফতুল্লা খাল ও শিকদারবাড়ি খাল পরিষ্কার করে প্রবাহমান করা হয়েছে। একইসঙ্গে খালগুলোর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে তিন হাজার ৫২৪ ট্রাক বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ১১ কিলোমিটার খাল। অসচেতন মানুষ যাতে আবারও ময়লা ফেলে খাল ভরাট না করে, সেজন্য বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লিফলেট বিতরণ করা সহ সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা-কলাগাছিয়া খাল, সোনারগাঁওয়ের পঙ্খিরাজ ও বস্তল খালসহ আরও বেশকিছু জলাশয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন
স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন জেলার দুই সরকারি হাসপাতাল ৩০০ শয্যা খানপুর হাসপাতাল এবং নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালকে ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ’র অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেখানে সেবার মান বৃদ্ধি, পরিচ্ছন্নতা এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশ গঠনে নেওয়া হয় বিশেষ পদক্ষেপ। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নবজাতকদের জন্য আধুনিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (এনআইসিইউ) চালু করা হয়েছে। সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম রোধে নেওয়া হয়েছে কার্যকর ব্যবস্থা। প্রয়োজনীয় টেস্টিং কিটসহ ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হচ্ছে।জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ডায়াথার্মি মেশিন খুবই দরকার বলে উপস্থাপন করেন উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম। সমস্যার গুরুত্ব অনুধাবন করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জেলা পরিষদ থেকে দ্রুততম সময়ে একটি ডায়াথার্মি মেশিনটি নারায়ণগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ভূমি অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ
নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ভূমি অফিসে ঘোষ ও দুর্নীতি বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন এবং স্বচ্ছতা আনয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যার সূফল সেবাগ্রহীতারা পাচ্ছে।
পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিকল্পনা
পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ‘গ্রিন আমব্রেলা’ কর্মসূচির আওতায় জেলার বাসচালক ও হেলপারদের জন্য কার্যকর ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার সূচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জেলার বাসচালক ও হেলপারদের দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও ইউনিফর্ম। পাশাপাশি তাদের জন্য ‘গ্রিন অ্যাকাউন্ট’ নামের কল্যাণ ফান্ড সুবিধা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সকল সব বাসচালকর ও হেলপারদের। সেইসঙ্গে গাড়িচালকদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত তথ্য সম্বলিত একটা ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম হোসেন বলেন, ‘এর আগে কোনো জেলা প্রশাসক আমাদের নিয়ে এভাবে চিন্তা করেননি। বর্তমান জেলা প্রশাসক আমাদের জন্য অনেক কিছু করে দিয়েছেন যার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো সারা জীবন তার কাছে।
শহরের যানজট নিরসন
শহরের যানজট নিরসনে অটো, ইজিবাইক, সিএনজির নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আলাদা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে দখলে থাকা শহরের মীর জুমলা রোডকে হকারমুক্ত করে বাস চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তা মেরামত এবং দীর্ঘদিনের অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের মাধ্যমে যানজট দৃশ্যত কমেছে। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের নিয়মিত অভিযানে রাস্তায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে; ফলে সড়কে ফিরছে শৃঙ্খলা।
নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোগান্তি লাঘবে কমিউটার ট্রেন চালু
নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নতুন অত্যাধুনিক কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছে। গত ২৬ মার্চ ট্রেন সংযোজন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডিসি। নারায়ণগঞ্জে প্রথম জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে উদ্বোধন করেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তরকারী উদ্যোগ
শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কেবল নয় ফলাফল মুখী শিক্ষা বিকশিত হোক মানবতার দীক্ষা। এই স্লোগানকে সামনে রেখে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। শুধু শিক্ষিত হলেই চলবে না মানবিক বোধ সম্পন্ন শিক্ষিত হতে হবে। এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ জানার জন্য বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল স্কুলের শিক্ষক সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সুশীল সমাজ বিভিন্ন সাংবাদিকবৃন্দদের নিয়ে একটি মত বিনিময় সভার আয়োজন করেন। কিভাবে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করবে। নারায়ণগঞ্জের অনেক পুরনো ঝরাজীর্ণ আইন কলেজকে পূন সংস্কারের জন্য কার্যক্রম চলমান আছে।
ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ ভূমিকা
ক্রীড়াঙ্গনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। স্টেডিয়ামকে পূন সংস্কারের মাধ্যমে উন্নতি করার জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এবং বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন কে আর্থিক অনুদান দিয়ে পাশে থেকেছেন। জেলার বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করেছেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন এবং পাশাপাশি তাদেরকে উপহার হিসাবে খেলাধুলা সামগ্রী বিতরণ করেছেন। বিভিন্ন প্রতিবন্ধী স্কুল ও পরিদর্শন করেছেন এবং অনুদান সহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। বেকার সমস্যা দূরীকরণে যুব উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
জেলার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ
জেলার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভূমিকা পালন করে নারায়ণ মোড় জেলা বাসিকে শান্তিতে রাখছেন। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া শারদীয় দুর্গা উৎসবকে শান্তি সম্প্রীতি উৎসব মুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করে এবারে শারদীয় দুর্গোৎসব নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর উৎসবমুখর সম্প্রীতির বন্ধনে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
কৃষি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ
কৃষি ক্ষেত্রে আড়াইহাজারে এক ফসলি জমির জায়গায় তিন ফসলি জমির উদ্ভাবনের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন এবং উন্নত কৃষি যন্ত্রের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মৎস্য সংগ্রহে ও বৃদ্ধিতে যেখানেই খাল বিল পুকুর আছে সেখানেই পানি পরিষ্কার করে মৎস্য চাষের জন্য উৎসাহিত করেছেন।
প্রকাশ্য লটারি: নারায়ণগঞ্জে ঘুষমুক্ত বদলির নতুন দৃষ্টান্ত
নারায়ণগঞ্জ জেলায় ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলিতে এবার তৈরি হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নতুন দৃষ্টান্ত। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা সোমবার জেলার ৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত ৩০ জন ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে প্রকাশ্য লটারির মাধ্যমে একযোগে বদলি করেন। ঘুষ, সুপারিশ ও তদবিরমুক্ত এ ব্যতিক্রমী পদক্ষেপকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে জনবল সংকট থাকায় কয়েকজন ইউপি প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে একসাথে দুইটি ইউনিয়নের প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জনবল সংকটজনিত পরিস্থিতির মধ্যে স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই প্রকাশ্য লটারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানায় প্রশাসন।
লটারি শুরুর আগে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “বদলির ক্ষেত্রে সংসদীয় আসন, কর্মকর্তাদের স্থায়ী ঠিকানা, কর্মমূল্যায়ন এবং সামগ্রিক উপযোগিতা বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় লটারির মাধ্যমে কর্মস্থল নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বচ্ছ প্রশাসন নিশ্চিত করতে প্রকাশ্য লটারি ছাড়া বিকল্প নেই।”
নারায়ণগঞ্জ সদরের বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হক সরকার লটারির মাধ্যমে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া এবং সনমনপুরা ইউনিয়ন পরিষদে বদলি হয়েছেন। তিনি বলেন, “সবাইয়ের সামনে লটারি হয়েছে। এখানে ঘুষ বা তদবিরের কোনো সুযোগ ছিল না।”
আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বদলি হয়ে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ সদরের কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদে। তিনি বলেন, “ ডিসি স্যার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন সরকারের নিয়ম মেনেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
উচিৎপুরা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন লটারিতে কাচপুর ইউনিয়ন পরিষদে বদলি হয়ে জানান, “এভাবে বদলিতে কারো লবিং বা সুপারিশের সুযোগ ছিল না। যার যেখানে নিয়তি, সেখানেই দায়িত্ব পড়েছে।”
অন্যান্য ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপ
জেলার বিভিন্ন অসহায় নিপীড়িত দুঃখ ভরা ক্লান্ত হৃদয়ের মানুষেরা বিভিন্ন সময় আর্থিক অনুদানের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলে তাৎক্ষণিক তা তদন্ত করে তাদেরকে আর্থিক অনুদান দিয়ে পাশে থাকেন।
প্রতিবন্ধীদের প্রায়ই হুইলচেয়ার বিতরণ করে থাকেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাদা ছড়ি বিতরণ করেছেন।
বয়স্ক ও বিধবা ভাতা যাতে সঠিক মানুষ পায় তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
জেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট মেরামত করে দিয়েছেন।
ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে আর্থিক অনুদান দিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের প্রাণপ্রিয় শীতলক্ষা নদীকে বাঁচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন এবং তা খুব দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে জানা যায়।
বিভিন্ন ফার্মেসি ডেট ফেল ওষুধ ও নকল ঔষধ বিক্রির কারণে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চলমান রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনে মাত্র ১১২ টাকায় সরকারি চাকরি দিয়েছেন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে।
বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
নারী উন্নয়ন ও বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে আর্থিক অনুদান দিয়ে তাদের পাশে থাকছেন।
নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় ঈদগাহকে আধুনিক ঈদগায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে।
এশিয়ার বিখ্যাত লাঙ্গলবন্দর স্নান এলাকাকে পর্যটন নগরী বানানোর কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পরই নানা সমস্যা দেখতে পাই। যোগদানের আগে মনে করেছিলাম হয়তো নারায়ণগঞ্জ অনেক উন্নত হবে। কিন্তু এখানে আসার পর আমি অবাক হয়ে যাই। ঢাকার সঙ্গে একটি জেলা এমন থাকবে সেটা আমাকে ভাবিয়ে তুলে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি নানামুখী পদক্ষেপ নিই। নারায়ণগঞ্জবাসীর সহযোগিতায় এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আশা করছি নারায়ণগঞ্জবাসী বর্তমান ও ভবিষ্যতে এর সুফল ভোগ করছে ও করবে ইনশাআল্লাহ।