শীতে বাড়ির বয়োজ্যোষ্ঠ সদস্যরা হয়ে পড়েন গৃহবন্দী। প্রবীনদেরও শীতে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। যদি পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। এ বিষয়ে টিপস দিচ্ছেন সেরাজুম মনিরা
গরম কাপড়: বয়স্কদের কাপড় চোপড়ের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। শীতের তীব্রতা অনুযায়ী গরম কাপড় পরিয়ে দিতে হবে। একটু বেশি বয়স হলে দেখা যায় হাত পা সহজে গরম হতে চায় না তাই যতটা সম্ভব উষ্ণ রাখতে মোজা এবং উলেন গ্লাভস পরানো যেতে পারে। কারো কারো কাপড় ভিজিয়ে ফেলার প্রবণতা থাকে তাদের কাপড় চোপড় মাঝে মাঝে চেক করে দেখতে হবে। ভেজা কাপড় যত দ্রুত সম্ভব পাল্টে দিতে হবে, দরকার হলে এ্যাডালট ডায়াপার ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত ঠান্ডায় বা শৈত প্রবাহে খেয়াল রাখতে হবে গায়ের কাপড়, লেপ, কম্বল ইত্যাদি সরে যেন না যায়।
খাবার : যে সমস্ত খাবারে তার স্পর্শ কাতরতা আছে তা বর্জন করতে হবে। শীতকালে যে খাবারগুলো ঠান্ডা প্রকৃতির তা খাওয়ানো যাবে না। পুষ্টিকর সুষম খাবারের সাথে সাথে শরীর উষ্ণ রাখে তেমন খাবার দিতে হবে তবে পরিমাণ মতো যাতে আবার পেট গরমের সমস্যা না হয়ে যায়।
পানীয়: পানীয়ের ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে। কারণ শীতকালে পানির পিপাসা কম হয় আবার শরীর আর্দ্রতা হারায়। এই সময় ভেতর থেকে হাইড্রেন্ট থাকা খুব জরুরি। তাই প্রবীনদের রুটিনে কিছু না কিছু তরল খাবার বা পানীয় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এই তালিকায় স্যুপ রাখা যেতে পারে, হজমে সমস্যা না হলে হরলিক্স দেয়া যেতে পারে, বিশেষ কোন কারণ না থাকলে দুধ যেকোন বয়সেই পান করা যায়। তাছাড়া যারা চা পছন্দ করেন তাদের বিভিন্ন ধরণের হার্বাল চা করে দেয়া যেতে পারে। অনেকেই শরীর উষ্ণ রাখতে বারবার চা পান করেন। এতে করে অনিদ্রায় ভুগতে পারেন যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই বার বার চা না দিয়ে উল্লেখিত পানীয়গুলো অলটারনেট করে দেয়া যায়। এ সময় পানি পান করতে দিলে তাও সামান্য গরম পানি মিশিয়ে দিতে হবে, সরাসরি ঠান্ডাপানি দেয়া যাবে না।
সূর্যের তাপ: সূর্যের তাপ এমনিতেই অনেক রোগের প্রতিষেধক। ভিটামিন ডি-এর সবচেয়ে সহজলভ্য এবং উৎকৃষ্ট উৎস। প্রবীনদের যেহেতু বাইরে যাওয়া কম হয় তাই চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন কিছুটা সময় রোদে বসিয়ে রাখার। বাড়ির যে জায়গায় রোদ আসে সেখানেই একটা আরাম চেয়ারে আধশোয়া করেও গায়ে রোদ লাগানো যায়। ঠান্ডাজনিত কোন সমস্যা থাকলেও প্রতিদিনের রোদে তার উপকার হবে।
চিকিৎসা ও ওষুধ: রুটিন চেক আপগুলো নিয়মিত করাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো সময় ও নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।
ত্বকের যত্ন: শীতের কারণে বয়োজ্যোষ্ঠদের প্রতিদিন গোসল করানো সম্ভব হয় না। তাই কুসুম গরম পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দিতে অন্তত হাত-পা- মুখ নিয়মিত মুছিয়ে দিয়ে একটু লোশন বা অলিভ অয়েল মাখিয়ে দিতে। অনেকেই ঠান্ডার সমস্যায় বুকে তেল মালিশ করতে পছন্দ করেন তাও করে দেয়া যেতে পারে। যদি বেশিরভাগ সময় শুয়ে কাটান তাহলে পিঠেও অয়েল ম্যাসাজ করা দরকার তাতে পিঠের মাংসপেশিতে রক্ত সঞ্চালণ অব্যাহত থাকে তাই বেডসোর হতে পারে না।
মানসিক সাপোর্ট: ঘরের ভেতর শুয়ে বসে থাকতে থাকতে তাদের একঘেয়েমি লাগতে পারে। অনেক সময় নিঃসঙ্গ বোধ করতে পারেন। তাই তাদের সেবা যত্নের সময় ছাড়াও একটু সময় দিতে হবে। মানসিক সাপোর্টের জন্য অবসরে তাদের পাশে বসে একটু গল্পগুজব করতে হবে যাতে তাঁরা অবহেলিত বোধ না করেন।