উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারালো ১৪ শিশু, হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক

ভারতজুড়ে প্রতি বছর দিওয়ালি/দীপাবলী উৎসবে দেখা যায় নতুন ধরনের আতশবাজি-চকরি থেকে রকেট, স্পার্কার। কিন্তু এ বছরের ট্রেন্ডটি মারাত্মক রূপ নিয়েছে। শিশুদের মধ্যে ‘কার্বাইড গান’ বা ‘দেশি ফায়ারক্র্যাকার গান’ নামে পরিচিত ডিভাইসটি এই বার দিওয়ালি ঘিরে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও তা অভিভাবক ও চিকিৎসকদের কাছে ভয়াবহ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুধু তিন দিনের মধ্যে মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১২২-রও বেশি শিশু ভর্তি হয়েছে চোখে মারাত্মক আঘাত নিয়ে। এদের মধ্যে ১৪ জন চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছে। অতি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ভিদিশা, যেখানে স্থানীয় বাজারগুলোতে এই ঝুঁকিপূর্ণ ‘কার্বাইড গান’ খোলামেলা বিক্রি হয়। এর আগে রাজ্য সরকার ১৮ অক্টোবর একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। প্রতিটির বাজারদর প্রায় ১৫০-২০০ রুপি। এসব তৈরি যন্ত্রগুলো খেলনা মতই ও বিক্রি করা হচ্ছিল, কিন্তু এগুলো বোমার মতো বিস্ফোরণ ঘটায়। খবর এনডিটিভির। 

হামিদিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৭ বছর বয়সী নেহা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমরা একটি ঘরোয়া কার্বাইড গান কিনেছি। এটি বিস্ফোরিত হলে আমার চোখের একদিক পুরোপুরি পুড়ে গেছে। আমি আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।’

 

আরেক আহত রাজ বিশ্বকর্মা জানিয়েছেন, ‘ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউব শর্টসে ভিডিও দেখে আমি ঘরে বসেই একটি ফায়ারক্র্যাকার গান বানানোর চেষ্টা করেছিলাম। এটি মুখের সামনে বিস্ফোরিত হয়ে আমার চোখে আঘাত করে… আর আমার চোখ নষ্ট হয়ে গেল।’

এদিকে, ভিদিশা পুলিশ এসব যন্ত্র বিক্রির অভিযোগে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ইন্সপেক্টর আর.কে. মিশ্রা বলেছেন, ‘তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যারা এসব কার্বাইড গান বিক্রি বা প্রচার করছে-তারা আইনি সম্মুখীন হবেন।’

বগোপাল, ইন্দোর, জাবালপুর ও গ্বালিয়রের বহু হাসপাতালের চক্ষু বিভাগগুলোতে তরুণ রোগী ভর্তি হয়ে ভরে উঠেছে। শুধু হামিদিয়া হাসপাতালে গত ৭২ ঘণ্টায়ই ২৬ জন শিশু ভর্তি হয়েছে।

চিকিৎসকেরা অভিভাবকদের সতর্ক করে বলছেন-এটি খেলনা নয়, এটা একটি অনুপ্রাণিত বিস্ফোরক। হামিদিয়া হাসপাতালের সিএমএইচও ডা. মানিশ শর্মা বলেন, ‘এই ডিভাইস সরাসরি চোখের ক্ষতি করে। বিস্ফোরণে ধাতব কণিকা ও কার্বাইড থেকে সৃষ্ট বাষ্প রেটিনাকে পুড়িয়ে ফেলে। আমরা এমন বহু রোগী দেখছি যেখানে পুতলি ফেটে গেছে, যার ফলে স্থায়ী অন্ধত্ব হয়েছে।’  অনেকের দৃষ্টি হয়তো আর কখনো পূর্ণ ফিরে আসবে না।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিশুরা প্লাস্টিক বা টিন পাইপ ব্যবহার করে ‘কার্বাইড গান’ বানাচ্ছে, ভিতরে ভরছে গুলির গুঁড়া, ম্যাচস্টিকের মাথা ও ক্যালসিয়াম কার্বাইড—তারপর একটি ছিদ্র দিয়ে জ্বালালে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ভেতর থেকে জোরালো বিস্ফোরণ ঘটে। যখন মিশ্রণ জ্বলছে, তখন তা ধ্বংসাত্মক বার্গে পরিণত হয়। এসময় ধাতব টুকরা ও জ্বলন্ত গ্যাস মুখ ও চোখের দিকে ছুটে আসে।

পুলিশ বলছে, মেলা ও রাস্তাঘাটের দোকানে এটি ‘মিনি কামান’ নামে বিক্রি হচ্ছে, কোনো নিরাপত্তা বিধি ছাড়াই।এসবের জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনে দায়ী অনলাইন প্ল্যাটফর্ম-ইনস্টাগ্রাম রিলস ও ইউটিউব শর্টসযেখানে ‘ফায়ারক্র্যাকার গান চ্যালেঞ্জ’ নামে ভাইরাল ভিডিও ছড়িয়েছে। আর জেন-জি এবং  টিনএজাররা লাইক ও ভিউ পেতে এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।