স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বলেছেন, তার দেশে ‘ইসলামের কোনো ঠাঁই নেই।’ তার এই মন্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, কেননা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট পদ নেবে স্লোভাকিয়া। মার্চে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন রবার্ট ফিকো। তবে তার বামপন্থ জাতীয়তাবাদী দল পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ভোটের আগেও ফিকো অভিবাসন নিয়ে চরমপন্থি মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, তিনি স্লোভাকিয়ায় একজন মুসলিমকেও প্রবেশ করতে দেবেন না। নির্বাচন পরবর্তী প্রথম সাক্ষাৎকারেও তিনি ওই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। এ খবর দিয়েছে বৃটেনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা।
খবরে বলা হয়, স্লোভাকিয়ার বার্তা সংস্থা টিএএসআর’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফিকো অভিবাসন নিয়ে বলেন, ‘আমি এখন কিছু বলবো, যা অদ্ভুত শোনাবে। আমি দুঃখিত, তবে স্লোভাকিয়ায় ইসলামের কোনো স্থান নেই।
আমি মনে করি, এসব বিষয়ে স্পষ্টভাবে ও প্রকাশ্যে কথা বলা রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব। আমি এখানে হাজার হাজার মুসলিম দেখতে চাই না।’
স্লোভাকিয়া ১লা জুলাই ইইউ’র প্রেসিডেন্ট পদে সামিল হবে। ইইউর প্রেসিডেন্ট পদটি ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্র ভোগ করে থাকে। এবার স্লোভাকিয়ার পালা। ফলে ইউরোপে অভিবাসন ও শরণার্থী সংকট নিয়ে আরও বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ পেতে যাচ্ছে দেশটি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়ার মধ্যে আলাদা একটি ব্লক আছে। ৪টি দেশই অভিবাসন নিয়ে ইউরোপকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছে। তারা দাবি তুলেছে যে, ইউরোপে প্রবেশের প্রধান পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হোক। এর আগে ইইউ যখন গ্রিস ও ইতালি থেকে শরণার্থী ও অভিবাসীদের গ্রহণ করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর কোটা নির্ধারণ করে দেয়, তখন স্লোভাকিয়াকে ২৬০০ অভিবাসী নিতে বলা হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন ফিকো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাল্টা সহ বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসন বিষয়ে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার মাল্টার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন যে, তারা (মুসলিম) আসাটা সমস্যা নয়। কিন্তু সমস্যা হলো তারা দেশের চরিত্রই বদলে দেয়। আমি আমাদের দেশের ঐতিহ্য পরিবর্তন করতে চাই না। এই দেশ কন্সট্যান্টাইন-মেথডিস্ট ঐতিহ্যেই সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যারা বলছে স্লোভাকিয়াকে বহুসংস্কৃতি ধারণ করতে হবে, তারা এই দেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়ায় স্লোভাকিয়ার ইসলামিক ফাউন্ডেশন এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে, ‘প্রধানমন্ত্রীর বারংবার [ইসলামের প্রতি বিরূপ] মন্তব্য শুধু স্লোভাক মুসলিমদেরই ক্ষতি করে না, বরং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দেশের স্বার্থের জন্যও ক্ষতিকর। কেননা, দেশটি এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে।’