ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়ায় গ্রেপ্তার লেবানিজ সাংবাদিক

ইসরায়েলকে বয়কট করার আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন লেবানিজ সাংবাদিক লায়াল আলএখতিয়ার। রাজধানী বৈরুতের বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ব সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়ার সাংবাদিক লায়ালের বসবাস দুবাইতে। বুধবার বৈরুতে এসে পৌঁছানোর পর তাকে লেবানন সরকার আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এদিকে, সংবাদ মাধ্যম আল-মনিটর জানিয়েছে, সম্প্রতি পাঁচ কোটি লেবানিজ পাউণ্ড (প্রায় ৫৬০ মার্কিন ডলার) জামিন দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন লায়াল। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে।

মুক্তির পর লায়াল এক্সে লেখেন, ‘মানুষকে ও তার পদমর্যাদাকে যথেষ্ঠ পরিমাণে অবমাননা করা হয়েছে। ইসরায়েলিরা সীমান্তে আছে। জুমেইরাহ, দাওউরা অথবা দেকওয়ানেতে নেই।’

আল আরাবিয়া জানায়, এক বছরেরও বেশি সময় আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) আরবিভাষী মুখপাত্র কর্নেল আভিচে আদ্রাই’র সাক্ষাৎকার নেওয়ার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস হামলা চালানোর কয়েকদিন পর পাল্টা হামলার অংশ হিসেবে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

এই অভিযান শুরুর কয়েকদিন পর লায়াল আলএখতিয়ার কর্নেল আদ্রাইর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।

সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পর লেবাননের এক সামরিক কৌঁসুলি লায়ালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের একটি সংগঠন ‘শত্রুপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের’ অভিযোগ আনার পর এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সে সময় লায়াল সামাজিক মাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘হিজবুল্লাহ সংশ্লিষ্ট মানুষ সাংবাদিকের ছদ্মবেশে, ভুয়া নাম ব্যবহার করে’ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। এই পদক্ষেপ একটি রাজনৈতিক নির্যাতনের সমতূল্য। এটা বিচারিক শোষণ। এর সঙ্গে অধিকার, সত্য ও ন্যায়বিচারের কোনো যোগসূত্র নেই’, যোগ করেন তিনি।

লায়াল আরও লেখেন, ‘যারা এর পেছনে রয়েছে, তারা নিজেদের দিকে নৈতিক, জাতীয় ও মানবিক অপমান টেনে এনেছে। এরাই সেই মানুষ যারা দেশে লুটপাট চালিয়েছে, মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে। তারাই এখন নিজেদের অপরাধ ঢাকতে বিভিন্ন ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। তারা স্বাধীনতার মুখ চেপে ধরতে চায়’। আমি ভীত নই, কারণ আমি আজকের দিন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত একজন লেবানিজ হয়েই থাকব এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ পর্যন্ত আরব থাকব। তোমরা যাই করো না কেন, আমার স্বাধীনতা, আমার মর্যাদা বা আমার বিশ্বাসকে স্পর্শ করতে পারবে না।

সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে লায়াল লেখেন, ‘আমি সম্মানের সঙ্গে (তার) সাক্ষাৎকার নিয়েছি। সব জরুরি প্রশ্ন করেছি এবং সাক্ষাৎকার শেষ করেছি। ব্যাস, এটুকুই। এর বেশি কিছু নয়। আমি তার কোনো প্রশংসা করিনি বা তাকে অপমানও করিনি। একজন পেশাদার সাংবাদিক তার অতিথির প্রতি সম্মান জানাবেন। সে বিরোধী পক্ষের হলেও।

২০২৩ সালে লায়ালের প্রতি সমর্থন জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয় আল আরাবিয়া।

সেখানে বলা হয়, ‘আমাদের সহকর্মী লায়াল আলএখতিয়ার আজ যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, তা সার্বিকভাবে সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকতার মূল্যবোধের প্রতি হামলার সমতুল্য। পাশাপাশি, এটি পেশাদার গণমাধ্যম চর্চা, সংবাদ পরিবেশনের ভারসাম্য রক্ষা এবং একইসঙ্গে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালনের প্রতিও হুমকি।’

জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ বিষয়টি বারবার উল্লেখ করেন লায়াল। জানান, চাকরিসূত্রে চাইলেও তিনি এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার কাজটি প্রত্যাখান করার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না।

Comments (0)
Add Comment