ইরান সফররত রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে পরমাণু কর্মসূচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই ইস্যুতে কোনো আলোচনায় না যাওয়া। ইরান বলেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত ‘সর্বোচ্চ চাপপ্রয়োগের’ মার্কিন নীতি বাতিল করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হবে না। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, পারমাণবিক আলোচনার বিষয়ে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা চাপ, হুমকি বা নিষেধাজ্ঞার আওতায় কোনো আলোচনা করব না।। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তেহরানে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন মাসুদ। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্ত া সংস্থা রয়টার্স।
তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টাই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে কাজ করছে।
ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির ২০১৫ সালে একটি পারমাণবিক চুক্তি হয়। এর তিন বছর পর ২০১৮ সালে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেন। পাশাপাশি ইরানের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তোলা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। এরপর থেকে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পারমাণবিক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা শুরু করে তেহরান।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কারণ উভয় শক্তিই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৌশলকে কীভাবে মোকাবিলা করবে তা বিবেচনা করে। মঙ্গলবার
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরান ও রাশিয়ার একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য উপযুক্ত ক্ষমতা রয়েছে এবং আমরা তেহরান ও মস্কোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া জোরদার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইরান ও রাশিয়ার আঞ্চলিক ইস্যুতে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং আমরা আমাদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে চাই, যোগ করেন তিনি।
পেজেশকিয়ান চুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করারও আহ্বান জানান। বলেন, দুই দেশের আলোচনা সত্ত্বেও, একটি পুনর্নবীকরণ চুক্তি চূড়ান্ত করার অনুরূপ প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ রয়ে গেছে।
বৈঠকে লাভরভ পেজেশকিয়ানকে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ইরান এবং রাশিয়া একে অপরের সঙ্গে কার্যকর আঞ্চলিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
এদিকে, ল্যাভরভের সঙ্গে পৃথক আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি দেশটির পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পরমাণু আলোচনায় ইরানের অবস্থান সম্পূর্ণ পরিষ্কার। আমরা চাপ ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আলোচনা করব না। যতক্ষণ পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এ বিষয়ে মস্কোতে তেহরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিও বলেছেন, আলোচনায় বিশেষভাবে পারমাণবিক সমস্যা এবং ক্ষেত্রে যৌথ পন্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাহ্যিক চাপ বা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়ে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করবে না। সফররত রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা করেন। বলেন, চাপ, হুমকি এবং নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আলোচনা অর্থহীন। ইরান JCPOA পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করেছে। চুক্তি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা ২০২১ সালে শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ চুক্তিটি রক্ষার জন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে রাশিয়ার সমর্থনকে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি যে হুমকি বা জবরদস্তি ছাড়াই চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার কূটনৈতিক ক্ষমতা এখনও বিদ্যমান।
তিনি সমাধানের জন্য মস্কোর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে গাজা এবং সিরিয়াসহ আঞ্চলিক সংঘাতের বিষয়েও আলোচনা করেছেন।
ল্যাভরভতেহরানের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে অগ্রহণযোগ্য বলে সমালোচনা করেছেন। উভয় পক্ষই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব মোকাবেলায় সহযোগিতা সম্প্রসারণে সম্মত হয়েছে।
ল্যাভরভ জ্বালানি, বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার তেহরান সফর করেন। এরপর তিনি মধ্যপ্রাচ্যে তার সফর অব্যাহত রাখতে কাতারে যান।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পারমাণবিক আলোচনার বিষয়ে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা চাপ, হুমকি বা নিষেধাজ্ঞার আওতায় কোনো আলোচনা করব না।
এ বিষয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন অর্থ বিভাগের অভিযোগ, ইরান তেল বিক্রি ও পরিবহনের জন্য একটি গোপন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে।