ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দিন দিন রয়্যাল নেভির উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাজ্য। দেশটি মনে করে, স্বাধীন ও মুক্ত মহাসাগরকে রক্ষা করার বাধ্যবাধকতা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের একার নয়। এ দায়িত্ব সকলের।
‘এইচএমএস তামার’এবং এইচএমএস স্পে’ নামে রয়্যাল নেভির (বৃটিশ নৌবাহিনী) দুটি যুদ্ধজাহাজ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পাঁচ বছরের জন্য মোতায়েন করা আছে। জাহাজদুটিকে পর্যায়ক্রমে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসার পরিবর্তে রয়্যাল নেভি তাদের ক্রুদের সাদা, লাল এবং নীল এই তিনটি দলে বিভক্ত করে ঘোরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাহাজদুটি টোঙ্গা (প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র) থেকে শুরু করে বাংলাদেশ- এ অঞ্চল জুড়ে নিজেদের স্থায়ী উপস্থিতি প্রদর্শন করে বন্দরগুলোতে পোর্ট কল (পণ্য লোড-আনলোডের জন্য সাময়িক যাত্রাবিরতি) দিচ্ছে।
তামার জাহাজ থেকে নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রয়্যাল নেভির প্রধান অ্যাডমিরাল স্যার বেন কি জানিয়েছেন, স্বাধীন ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বজায় রাখার বিষয়টি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের উপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের পুলিশম্যান হবে এমনটা দেখার আশা আমরা কোনভাবেই করতে পারি না। স্বাধীন ও মুক্ত মহাসাগরকে রক্ষা করার বাধ্যবাধকতা আমাদের সবার”।
এসবের মধ্যে সাবমেরিন অপারেশনগুলোতে ‘বার্ডেন শেয়ারিং’ করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সম্প্রতি নিরাপত্তা চুক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর একটি হল অকাস (অস্ট্রেলিয়া-ইউকে-ইউএস অ্যালায়েন্স)”।
উল্লেখ্য, গত বছর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে নতুন নিরাপত্তা জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তিন দেশের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে জোটের নামকরণ করা হয় অকাস। এই নিরাপত্তা চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণের প্রযুক্তি সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী তিন দেশের একটির প্রতিনিধি হিসেবে অ্যাডমিরাল স্যার বেন কি আশা প্রকাশ করেন যে, এ অঞ্চলে তিন দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করবে। তিনি বলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তাকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য (যা আমরা করেই থাকি) যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতির একটি খুব স্পষ্ট প্রকাশ হলো অকাস। আর, অস্ট্রেলিয়ার সাথেতো আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব রয়েছেই।”
বৃটিশ নৌবাহিনীর প্রধান বলেন, “আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে এই ভবিষ্যদ্বাণী করছি যে, এই অঞ্চলে রয়্যাল নেভির আরও বেশি আগমন দেখতে পাবেন।”
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষ করে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর কাছে দিন দিন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত মাসে নতুন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে করা প্রথম ফোনকলেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো অঞ্চলে যুক্তরাজ্য-মার্কিন সহযোগিতার পরিধি নিয়ে আলোচনা করেন। ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র এ খবর নিশ্চিত করে তখন বলেছিলেন, অকাস চুক্তি (অঞ্চলটির) স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং চীনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের প্রচেষ্টার অংশ।