বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত বুধবার (আজ ৫ ফেব্রুয়ারি) সম্পন্ন হবে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রূয়ারি) তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও মুসল্লিদের নফল নামাজ জিকির-আসগারের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে জুবায়ের অনুসারীদের (শুরায়ী নেজাম) দুই পর্বের ইজতেমা শেষ হবে। তাবলীগের ছয় ওসুলের ওপর গতকাল বাদ ফজর ভারতের মাওলানা খুরশিদের বয়ানের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় দিনের ইজতেমা শুরু হয়।
দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনেও ইজতেমাস্থলে দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। আজ আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে শিল্পনগরী টঙ্গীতে এখন মুসল্লিদের ঢল। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের আগমনের ঢল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটির একাধিক সদস্য। কাঙ্ক্ষিত আখেরি মোনাজাত ভারতের মাওলানা জুবায়েরুল হাসান পরিচালনা করার কথা রয়েছে।
মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান: মঙ্গলবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা খুরশিদ ইমান-আমল, জাহান্নাম-জান্নাত ও দাওয়াতের তাবলীগের মেহনতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখেন। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ইসলামের দেখানো পথে আমল করতে হবে, তাহলে কামিয়াবি পাওয়া যাবে। তিনি বলেন,? সব কাজের আগে বিসমিল্লাহ বলা অনেক ফজিলত। যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহ বলে খানা খায়, বিছানায় ঘুমাতে যায়, ঘর থেকে বের হয় এবং বিসমিল্লাহ বলে যে কাজটি করুক শয়তান তার সঙ্গে শরিক হতে পারে না। তাই বিসমিল্লাহর সঙ্গে আমল করার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, নবীর তরিকার ওপর শয়তান কোনো দখল নিতে পারে না। এজন্য নবীর তরিকা ছাড়া রক্ষার কোনো রাস্তা নাই, নাজাতের কোনো পথ নাই। কারণ আল্লাহতায়ালা নবী করীম (স.)-এর সুন্নত অনুযায়ী চলা ব্যক্তিদের পছন্দ করেন।
যেকোনো ছোট কাজ, বড় কাজ মোহাম্মদ (স.) এর তরিকা মতো করা এটাই দ্বীন, এটাই ধর্ম। এই আমলই তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যদি এর বিপরীত হয় তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, নামাজ দ্বীনের খুঁটি। যে ব্যক্তি নামাজকে কায়েম করলো, সে যেন দ্বীনকে কায়েম করলো। যে ব্যক্তি নামাজ ধ্বংস করলো সে যেন দ্বীনকে বরবাদ করলো। নবী করীম ( স.) বলেন, মসজিদে আজান হলে যেসব ব্যক্তি মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে থাকে আমার দিলে চায় তাদের ঘর-দোয়ার আগুনে জ্বালিয়ে দিই। যারা মসজিদে মুয়াজ্জিনের আজান শুনে মসজিদে গেল না তাহলে তারা মুনাফিকি করলো, কুফরি করলো। দুনিয়ার যত রকমের চোর আছে সবচেয়ে খারাপ চোর হলো যে নামাজের মধ্যে চুরি করে। যে ব্যক্তি নামাজের মধ্যে ঠিকমতো রুকু-সিজদা করে না সেই নামাজের মধ্যে চুরি করলো। তিনি আরও বলেন, যারা নামাজ ঠিক নাই তার জিন্দগি ঠিক নাই, যার নামাজ সুন্দর তার জিন্দেগি সুন্দর।
আইনশৃঙ্খলা: দ্বিতীয় পর্বে মোনাজাত নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান। ইজতেমা ময়দানে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, আগামীকাল দুপুর ১২টায় আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এবারও আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। মোনাজাতের আগে ও পরে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে আব্দুল্লাপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পে একটি লেনে যান চলাচল চালু থাকবে। এবারের আয়োজনেও আমরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়েছি। ময়দানে বিদেশি মুসল্লিদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার আছে। বিদেশি মুসল্লিদের কথা চিন্তা করে ময়দানে সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জিএমপি কমিশনার মুসল্লিদের কাছে অনুরোধ রেখে বলেন, আপনারা মোনাজাতের আগেই মহাসড়ক ও শাখা সড়কে বসবেন না। ময়দানের চারপাশের সড়ক সচল রাখতে হকারদের রাস্তায় বসতে দেয়া হবে না। আগামী বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিবের পর শুরায়ী নেজামের (জুবায়ের অনুসারী) কাছ থেকে ইজতেমা বুঝে নেবে প্রশাসন। শুক্রবার মাঠটি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রেখে শনিবার (৮ই ফেব্রুয়ারি) মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরে তারা তাদের তত্ত্বাবধানে মাঠ পুনরায় প্রস্তুত করে ১৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে যাতায়াতের সুবিধার্থে ঢাকা-ময়মনসিং মহাসড়ক যান চলাচলে গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৪ঠা ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ৫ই ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত আব্দুল্লাহপুর বগুড়া বাইপাস এবং মিরার বাজার বন্ধ থাকবে।
মাঝে ৮ দিন বিরতির পর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা। ১৬ই ফেব্রুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা। পরে ১৮ই ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব প্রশাসনের কাছে ময়দান বুঝিয়ে দেবেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।
যৌতুকবিহীন বিয়ে: মঙ্গলবার বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়। সম্পূর্ণ শরিয়ত মেনে তাবলীগের আয়োজন অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন বাদ আসর বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে বর ও উভয় পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় এ বিয়ে। প্রতিবারের মতো এবারো ইজতেমা শুরু হওয়ার আগের দিন থেকেই অভিভাবকটা দম্পত্তির নাম তালিক ব্যবস্থা করান। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার আসরের নামাজের আগেই যৌতুকবিহীন বিয়ের জন্য ২৩ জোড়া নাম তালিকাভুক্ত এবং বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।
আয়োজক কমিটির বক্তব্য: জুবায়ের অনুসারী আয়োজক কমিটির মুরব্বি মো. মাহফুজ হান্নান বলেন, ময়দানে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকায় পরিচ্ছন্নভাবে বিশ্ব ইজতেমা পালিত হয়েছে। ময়দানে আগত দেশ-বিদেশের লাখো লাখো মুসল্লি স্বাচ্ছন্দ্যে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল রয়েছেন। আজ ১২ টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।