ইউরোপের সর্ববৃহৎ মসজিদ রোমে, একসঙ্গে নামাজ পড়েন ১২ হাজারের বেশি মুসল্লি

ইতালির রাজধানী রোমের উত্তরে অবস্থিত ইউরোপের সর্ববৃহৎ মসজিদ গ্রেট মস্ক অব রোম। মসজিদটি সবুজে ঘেরা পরিবেশে, মন্টে অ্যান্তেন্নে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। প্রায় ৩০,০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই মসজিদে একসঙ্গে ১২ হাজারের বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। 

রোমের গ্রেট মসজিদের ইতিহাস

মুসলিম জনসংখ্যা বাড়তে থাকায় ইতালিতে একটি কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। মুসলিম ইবাদতকারীদের প্রয়োজন পূরণে ১৯৭০-এর দশকে এই মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু হয়।

ইতালিয়ান স্থপতি পাওলো পোর্তোজেসি, ভিতোরিও গিগলিওত্তি এবং সামি মোসাউয়ি-এর তত্ত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হয়। ১৯৯৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। গ্রেট মসজিদ অব রোম শুধু নামাজের স্থান নয়, বরং ইউরোপের মুসলমানদের সম্মিলনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য : ইসলামি ও ইতালিয়ান শৈলীর মেলবন্ধন

  • বিশাল কেন্দ্রীয় গম্বুজ, চারপাশে ছোট ছোট গম্বুজ।
  • একটি মিনার (উচ্চতা ৪৩ মিটার), যা দূর থেকেই দেখা যায়।
  • মার্বেলের স্তম্ভ ও জ্যামিতিক নকশা।
  • ইসলামি ক্যালিগ্রাফি ও মোজাইক অলংকরণ।
  • প্রাচীন মুসলিম শাসনামলের বাগানের অনুকরণে নির্মিত ফোয়ারা ও উদ্যান।

মসজিদের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ ইসলামী ও স্থানীয় সংস্কৃতির সম্মিলনকে ফুটিয়ে তুলে।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

গ্রেট মসজিদ অব রোম ইবাদতের কেন্দ্র হওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও মুসলিমদের শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে আছে—

  • বড় নামাজ হল।
  • ইসলামী শিক্ষার ক্লাসরুম।
  • আন্তঃধর্মীয় সংলাপের কনফারেন্স কক্ষ।
  • ইসলামিক কালচারাল সেন্টার(ইতালীয় রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত)।
  • লাইব্রেরি ও প্রদর্শনী কক্ষ।

এখানে রমজানে নিয়মিত ইফতার আয়োজন, কোরআন শিক্ষার সেশন, আন্তঃধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মসজিদটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। মুসলিম দর্শনার্থীরাও প্রবেশ করতে পারেন।

ইউরোপে এই মসজিদের তাৎপর্য 

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রাণ কেন্দ্র (ভ্যাটিকানের অবস্থান) হিসেবে পরিচিত রোমে এই মসজিদের অবস্থান ইউরোপে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। এটি প্রমাণ করে, ইসলাম ইউরোপে ভিনদেশ থেকে আগত কোনো ধর্ম নয়, বরং ইউরোপের বর্তমান ও ভবিষ্যতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।