শিশুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে ইউনিসেফ, বিশেষ করে যারা সব ধরনের সুযোগ এবং সেবা থেকে বঞ্চিত। ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সর্বত্র সব শিশুর জন্য আরও ভালো একটি পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের শিশুদের জন্মের পর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠা পর্যন্ত পুরো জীবনচক্র নিয়ে কাজ করে ‘ইউনিসেফ বাংলাদেশ’। চলতি মাসে ইউনিসেফ বাংলাদেশের নতুন ‘ন্যাশনাল এম্বাসেডর’ বা জাতীয় শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা সাহা মীম। তিনি কেন এ দায়িত্ব পেলেন এবং ন্যাশনাল এম্বাসেডর হিসেবে তিনি কী দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে রয়েছে ব্যাপক কৌতুহল।
ইউনিসেফ বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, শুধু মীম-ই নন, বর্তমানে তিনি সহ মোট পাঁচজন বিশ্বজুড়ে শিশু অধিকার রক্ষায় নিবেদিত আন্তর্জাতিক সংস্থাটির ন্যাশনাল এম্বাসেডরস হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। বাকিরা হলেনঃ জুয়েল আইচ, আরিফা জামান মৌসুমী, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম।
ইউনিসেফ বাংলাদেশ জানায়, তাদের সবচেয়ে চেনা মুখগুলোর অন্যতম হলো ন্যাশনাল এম্বাসেডরস। শিশুরা দেশব্যাপী যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সেসবের উপর আলোকপাত করতে শিল্প, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও অন্যান্য ক্ষেত্রের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। শিশুদের পক্ষে, বিশেষ করে সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পক্ষে, সচেতনতা সৃষ্টিতে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা জোগাতে ন্যাশনাল এম্বাসেডরস স্বেচ্ছায় তাদের মূল্যবান সময় উৎসর্গ করেন। তারা ইউনিসেফ পরিবারের সম্মানিত সদস্য এবং ইউনিসেফের শ্রেষ্ঠ সহযোগী। ন্যাশনাল এম্বাসেডরস তাদের বিপুল সংখ্যক অনুসারীদের মাধ্যমে শিশু অধিকারের গুরুত্ব ও প্রতিটি শিশুর জন্য সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাদের বার্তা লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।
বিখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ ২০১৩ সালে ইউনিসেফ বাংলাদেশের ন্যাশনাল এম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত হন। ইউনিসেফ জানাচ্ছে, এই পদে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি শিশু অধিকার রক্ষা এবং শিশুর সুরক্ষা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বেশকিছু উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পুষ্টির জন্য একতা (#Unite4Nutrition) শীর্ষক প্রচারণায় তার সম্পৃক্ততা বহু মানুষকে শিশুর অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে উৎসাহ জুগিয়েছে।
২০১৩ সালে ন্যাশনাল এম্বাসেডর নিযুক্ত হওয়া অভিনেত্রী মৌসুমীর বিষয়ে ইউনিসেফের বক্তব্যঃ তিনি শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য, শিশুর পুষ্টি, জন্ম নিবন্ধন, শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও শিশুর টিকাদান বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করেছেন।
২০১৩ সালে বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব ইউনিসেফের ন্যাশনাল এম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ইউনিসিফের বেশকিছু ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি ও প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। তার বহু কর্মযজ্ঞের মধ্যে কয়েকটি হল: মিনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস, শিশু অধিকার সনদের ২৫ বছর পূর্তি, এভরি চাইল্ড এলাইভ, অনলাইন নিরাপত্তা ও বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহ। সাকিব রোহিঙ্গা শিশুদের অরক্ষিত পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরও পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশের আরেক জনপ্রিয় ক্রিকেটার মুশফিক ২০২০ সালে ন্যাশনাল এম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত হন। কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে তহবিল সংগ্রহের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। মুশফিক তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চ্যানেল ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচি, নবজাতকের স্বাস্থ্য ও সন্তান লালনপালন সংক্রান্ত উদ্যোগকে উৎসাহ প্রদান করেছেন। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় বাজেটে শিশুর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সুরক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে অধিকতর বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
মীম সম্পর্কে ইউনিসেফ বলছে ‘বাংলাদেশে নারী ও শিশু অধিকার রক্ষা এবং সমাজের সবচেয়ে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণে তার অঙ্গীকারের কারণে’ সম্প্রতি তিনি ন্যাশনাল এম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত হলেও ২০২০ সাল থেকেই তিনি ইউনিসেফের একজন বন্ধু হিসেবে পাশে আছেন এবং মাস্ক পরিধান ও কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। মীম তার প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে নারী অধিকারের পক্ষে কথা বলেন। তিনি তার লাখো অনুসারীদের কাছে তিনি সহিংসতার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছেন বলেও মূল্যায়ন করেছে ইউনিসেফ।
ন্যাশনাল এম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত হয়ে নিজের অনুভূতি জানালেন মীম, “ইউনিসেফের সাথে যুক্ত হতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। আমার খুবই ভালো লাগছে। ইউনিসেফে অন্য সব গুণীজনদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি।”
নতুন দায়িত্ব কীভাবে পালন করবেন জানতে চাইলে মীম বলেন, “বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শিশু এখনো তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। লাখো শিশু আজও সহিংসতা, শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহের শিকার। শিক্ষা ও সুন্দর ভবিষ্যতের আশা থেকে তারা বঞ্চিত। বহুনারী আজও ঘরেবাইরে নির্যাতনের শিকার। এগুলো আমাকে খুব ভাবায়, আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। ন্যাশনাল এম্বাসেডর হিসেবে আমি শিশু ও নারী অধিকার রক্ষায় সক্রিয়ভাবে কাজ করবো। আমি আমার এ দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। প্রত্যেক নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় আমি আমার সর্বোচ্চ করবো। কিন্তু, এ কাজতো একা কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে, আমাদের সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।”
প্রসঙ্গত, ওই পাঁচজনের পাশাপাশি ইউটিউব চ্যানেল ‘দ্য ঝাকানাকা প্রজেক্ট’-এর জন্য বিখ্যাত, প্রভাবক রাবা খান
২০১৮ সালে ইউনিসেফ বাংলাদেশের ইয়ুথ অ্যাডভোকেট হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। ইউনিসেফ বলছেঃ এই দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে রাবা জেন্ডার সমতা, অনলাইন নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য, খেলাধুলা এবং তরুণ-কেন্দ্রিক অন্যান্য বিষয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি বাংলাদেশের শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের জন্য একজন অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব এবং শিশু অধিকারের পক্ষে একজন শক্তিশালী প্রচারক।