যুক্তরাষ্ট্র সব ধরণের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ায় ইউক্রেনের পাশাপাশি সংকটে পড়তে যাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোও। কারণ, কিয়েভের এই ক্রান্তিলগ্নে ইউরোপের সহায়তা প্রত্যাশা করলেও, ইউক্রেনের আইনপ্রণেতারা মনে করেন ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ ছাড়া চলমান সংঘাত বন্ধ সম্ভব না। যদিও কিয়েভের দাবি ট্রাম্পের সহায়তা ছাড়াই পুতিন সেনাদের মোকাবিলায় প্রস্তুত জেলেনস্কি বাহিনী।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঋণচুক্তি, কানাডার সেনা সহায়তার ঘোষণা থেকে শুরু করে ইউরোপের নেতারা যখন সবদিক থেকে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছেন, তখন ভলোদিমির জেলেনস্কির সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ইউক্রেন।
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে জেলেনস্কিকে চূড়ান্ত অপমানের তিনদিন পর ইউক্রেনে সব ধরনের সামরিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, জেলেনস্কিকে অপমান করার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তি চুক্তির ডায়নামিক্স বদলে ফেলেছেন ট্রাম্প।
সিএনএনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এতে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা। আর বিবিসি’র বিশ্লেষণ বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপ-ইউক্রেন জোটের আত্মপ্রকাশ এখন সময়ের অপেক্ষা।
যদিও ইউরোপের বিশ্লেষকরা বলেছেন, ওয়াশিংটন কিয়েভকে সহায়তা না দিলে ইউরোপের একা এই সংকট থেকে ইউক্রেনকে উদ্ধার করতে পারবে না। তবে, ইউক্রেনের আইনপ্রণেতারা বিশ্বাস করেন, ইউরোপের দেশগুলো তাদের পাশে থাকলে রাশিয়াকে চাপে রাখা সম্ভব।
ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের প্রধান নির্বাহী ফ্যাব্রিয়ান জুলেগ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরে আসায় যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা ইউরোপের জন্য পূরণ করা কঠিন হবে। কিছু জায়গায় ইউরোপ ঠেকে যাবে। যদিও ইউক্রেন তাদের সক্ষমতার জানান দিয়েছে। যে কোনো মূল্যে তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাবে। কারণ, এটা স্পষ্ট, ইউক্রেনের নাম মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার আগ পর্যন্ত রাশিয়া থামবে না।’
ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের সদস্য সেরহেই রাখমানিন বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র শুধু সামরিক সহায়তা বন্ধ করবে এমনটা নয়। তারা আমাদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে আমাদের মিত্ররাও পিছিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ইউরোপের নেতারা যদি আমাদের পাশে থাকে এবং সময়, সদিচ্ছা ও অর্থ দিয়ে আমাদের সহায়তা করে, তেমন কোনো বিপদের আশঙ্কা করছি না।’
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এতে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা আরও কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করছে ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র দপ্তর। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়াই সীমান্তে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব বলে নিশ্চিত করেছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালতোনেন বলেন, ‘অবশ্যই আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তবে আমার মনে হয়, হোয়াইট হাউজ জেনেশুনেই এমন কৌশল ব্যবহার করেছে। হয়তো ইউক্রেনকে চাপে রেখে আর রাশিয়াকে সুবিধা দিয়েই তারা শান্তি ফেরাতে চায়।’
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী ও সরকারের এই সক্ষমতা আছে। যে পরিমাণ অস্ত্র আছে তা দিয়ে সম্মুখ সারিতে যুদ্ধ করতে পারব। তবে, এগুলো বিস্তারিতভাবে বলার জিনিস নয়।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর জেরে বহুবছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ছায়া থেকে বের হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ফিরেছে ইউরোপ।
তারা মনে করেন, পশ্চিমা নেতারা যদি এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের আলোচনায় প্রভাবক হয়ে উঠতে পারেন তবে তা হবে ইউরোপের অন্যতম বড় অর্জন।
তবে, এখানেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন হবে ইউরোপের। কারণ হিসেবে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে কোনোক্রমেই শান্তি আলোচনায় বসবে না মস্কো।