জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল খেরসন, জাপোরোঝিয়া, লুহানস্ক ও দোনেত্স্ককে আজ শুক্রবার নিজেদের সঙ্গে জুড়ে নেওয়ার আয়োজন করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ কথা জানিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়া নিয়ে বিতর্কিত গণভোটের পরপরই মস্কো এ উদ্যোগ নিল।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘নতুন অঞ্চল যুক্ত করতে আগামীকাল গ্র্যান্ড ক্রেমলিন প্রাসাদের সেন্ট জর্জ হলে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় এক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে।’ পেসকভ আরো বলেন, নতুন ভূখণ্ড সংযুক্ত করা উপলক্ষে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বক্তব্য দেবেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
মস্কোর রেড স্কয়ারে গতকাল এ অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। সেখানে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থাও নেওয়া হয়। জানা গেছে, রুশ বাহিনীর পূর্ণ বা আংশিক নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলের রুশ সমর্থিত নেতারা গতকালই এ উপলক্ষে মস্কোতে হাজির ছিলেন। এর এক দিন আগেই ওই চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে জুড়ে নিতে সরাসরি পুতিনের কাছে ‘অনুরোধ’ জানিয়েছিলেন তাঁরা।
ইউক্রেনীয়দের মধ্যে অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনব্যাপী গণভোটে রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে একচেটিয়া রায় এসেছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে কিয়েভ ও তার মিত্ররা বলছে, আগে থেকেই ঠিক করে রাখা ফল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের মতে, এ গণভোটের একমাত্র সমুচিত জবাব হতে পারে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং অস্ত্র সরবরাহ করে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে নিজ অঞ্চল পুনর্দখলে সহায়তা করা।
গত বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের ভূমির কোনো অংশ দখলে রাশিয়ার প্রচেষ্টা ইউক্রেন মেনে নিতে পারে না এবং এটি সহ্য করা হবে না। ’
ভূখণ্ড জুড়ে নেওয়ার লক্ষ্যে রাশিয়ার গণভোট ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিজ অঞ্চলের সুরক্ষায় প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন পুতিন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেফ বরেল বলেছেন, পুতিনের এ ধরনের হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গেই নেওয়া উচিত।
দক্ষিণের খেরসন ও জাপোরিঝিয়া এবং আগের লুহানস্ক ও দোনেত্স্ক ভৌগোলিকভাবে রাশিয়া ও ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমি করিডরের কাজ করবে। ২০১৪ সালে দক্ষিণ ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছিল রাশিয়া। নতুন আরো চারটি অঞ্চল দখল করা হলে সব মিলিয়ে ইউক্রেনের মোট ২০ শতাংশ ভূখণ্ড চলে যাবে রাশিয়ার হাতে।
পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভে এখনো লড়াই চলছে। কিয়েভের সেনারা ওই অঞ্চলে সফলতা পেয়েছে এবং দোনেত্স্কের কিছু এলাকা পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়েছে। দোনেত্স্কের এক রুশপন্থী কর্মকর্তা বলেন, ‘শত্রুপক্ষ প্রতিদিন শহর ঘেরাওয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমাদের ইউনিট সব আক্রমণ প্রতিহত করতে পারছে।’
নর্ড স্ট্রিমে নতুন ছিদ্র
রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে নতুন ছিদ্র খুঁজে পেয়েছে সুইডেন। এ নিয়ে পাইপলাইনটির মোট ছিদ্রের সংখ্যা দাঁড়াল চারে। এর আগে এ সপ্তাহের শুরুতে ডেনমার্ক ও সুইডেন পাইপলাইনটিতে বড় ছিদ্র পাওয়ার খবর দেয়। ন্যাটোর দাবি, এ ঘটনা ‘ইচ্ছাকৃত, খামখেয়ালি এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। ’ ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়াকে সরাসরি অভিযুক্ত না করলেও বলছে তাদেরও ধারণা এটি অন্তর্ঘাত। তবে রাশিয়া নিজেদের গ্যাস পাইপলাইনে এভাবে ‘বোকার মতো’ আক্রমণ চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। চতুর্থ ছিদ্রটি নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইনে শনাক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি।