মাত্র ছয় বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়েছেন মো. গিয়াস উদ্দীন। বাবার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি-বাড়ি কিছুই ছিল না। তাই ছোট দুই বোনকে নিয়ে দাদির কাছে থেকে বড় হন গিয়াস। সেখানে থেকে দুই বোনকে বিয়ে দেন। তবে বোনদের বিয়ে দিলেও ভূমিহীন হওয়ায় গিয়াসের সঙ্গে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিল না। এমন অবস্থায় তাকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দেওয়া হয়। আর এতেই কপাল খুলে যায় তার। বিয়ের পিঁড়িতে বসার সুযোগ পান তিনি। গিয়াস ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া গ্রামের মৃত বতু শেখ ও হাসিনা বেগম দম্পতির ছেলে।
এদিকে গিয়াসের জীবনকাহিনি ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের নিয়ে একটি নাটকের গল্প লিখেছেন ইউএনও মো. আক্তার হোসেন শাহিন। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে কুমারপট্টি আশ্রয়ণে নাটকটির শুটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ১৮ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকৌশলী এ নাটকে কাজ করছেন। গত ২৫ জানুয়ারি গিয়াসের বিয়ে সম্পন্ন হলেও রবিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে নববধূকে তোলা হয়েছে। এ উপলক্ষে গিয়াসের ঘরের ভেতর ফুল দিয়ে সাজানো হয় বাসর। আর এসব দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে নাটকের অংশ হিসেবে।
রবিবার সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গিয়ে কথা হয় গিয়াস উদ্দীন শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোটবেলায় আমরা তিন ভাইবোন বাবা-মাকে হারিয়েছি। দাদির কাছে শুনেছি বাবা ছিলেন দিনমজুর। তার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি বা বাড়ি ছিল না। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমরা তিন ভাইবোন দাদির কাছে থেকে বড় হয়েছি। সেখানে থেকেই আমি উপার্জনক্ষম হয়ে দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করেছি, তা জমিয়ে দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছি। যে কারণে জমি কিনে বাড়ি করতে পারিনি। তাই কেউ আমার সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিল না। বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানালে তিনি আমাকে আশ্রয়ণের একটি ঘর দেন। ওই ঘর পাওয়ার পর আমি বিয়ে করেছি।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, সালথায় এ পর্যন্ত ৬৩৩টি ঘর দেওয়া হয়েছে। এসব ঘর যেসব উপকারভোগীকে দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই সুখে-শান্তিতে বসবাস করছেন। তাদের অনেক সফলতা দেখেছি। এর মধ্যে গিয়াসের ভিন্নতর সফলতা রয়েছে। তা হলো, গিয়াস চার বছর বয়সে তার মাকে ও ছয় বছর বয়সে বাবাকে হারান। পরে তিনি ছোট দুই বোনকে নিয়ে দাদির কাছে বসবাস করতেন। সেখানে থেকে কষ্টকর জীবনের মধ্য দিয়ে বোনদেন বিয়ে দেন। অথচ নিজে বিয়ে করে সংসার পাতার মতো সুযোগ পাচ্ছিল না। কারণ তার জমি-ঘর কোনোটাই নাই। পরবর্তী সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২ শতাংশ জমিসহ তাকে একটি ঘর দিয়েছি। ঘর দেওয়ার পর তার বিয়ে করে সংসার করার যে স্বপ্ন ছিল, তা পূরণ হয়েছে। আমি গিয়াসের এসব ঘটনা নিয়ে একটি গল্প লিখেছি। সেই গল্পের ওপরই নির্মিত হচ্ছে একটি নাটক। নাটকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’।