পৃথিবীর প্রতিটি কোণে আল্লাহ তায়ালার অগণিত নেয়ামত ছড়িয়ে রয়েছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস, চোখ-কান-হৃদয়সহ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ—সবই আল্লাহর অপার কুদরতের নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।’ (সুরা নাহল: ১৮)
নেয়ামতের সাগরে মানুষ
মানুষের নিজের অস্তিত্বই একটি বিশাল জগৎ। চোখ, কান, নাক, হাত, পা ও দেহের প্রতিটি গ্রন্থি ও শিরা-উপশিরায় আল্লাহ তাআলার অসংখ্য নেয়ামত বিধৃত। সূক্ষ্মতম ও বিস্ময়কর হাজারো যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত প্রতিটি মানবদেহ নিজেই আল্লাহর কুদরতের জীবন্ত প্রমাণ। মানুষের পক্ষে কখনো এ সকল নেয়ামতের পূর্ণাঙ্গ হিসাব করা সম্ভব নয়, বরং আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহই মানুষের একমাত্র ভরসা।
নেয়ামতের শুকরিয়া ও সংরক্ষণ
নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় ও যথাযথ মূল্যায়ন করলে আল্লাহ তাআলা তা বৃদ্ধি করে দেন। কিন্তু মানুষের জন্য আল্লাহর দেওয়া সব নেয়ামতের আলাদা আলাদা শুকরিয়া আদায় করা খুবই কঠিন। এ কারণেই প্রিয় নবী (স.) একটি বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে দুনিয়ার যাবতীয় নেয়ামতের শুকরিয়া এবং নেয়ামত যেন দূরে সরে না যায়, সেজন্য আল্লাহর কাছে একান্ত প্রার্থনা করেছেন।
প্রিয়নবীর শেখানো দোয়া
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দোয়ার এটিও একটি ছিল:
আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নেমাতিকা ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুঝাআতি নিক্বমাতিকা ওয়া ঝামিয়ি সাখাত্বিকা।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই তোমার নেয়ামত দূর হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার দেয়া সুস্থতা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার পক্ষ থেকে হঠাৎ শাস্তি আসা থেকে এবং তোমার সব ধরণের অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চাই।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৮৩৭)
দোয়াটির তাৎপর্য
এই দোয়াটি নেয়ামত সংরক্ষণের একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তিনামা। এতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া হয়েছে:
১. নেয়ামতের অপসারণ: বিদ্যমান নিয়ামত হারানো থেকে।
২. স্বাস্থ্যের পরিবর্তন: সুস্থতা হারানো থেকে।
৩. হঠাৎ শাস্তি: আকস্মিক আজাব থেকে।
৪. সর্বপ্রকার অসন্তুষ্টি: আল্লাহর সকল ধরনের অসন্তুষ্টি থেকে।
এই চারটি দিক থেকে আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে একজন মুমিন প্রকৃতপক্ষে তার দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত কল্যাণ সংরক্ষণের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। দোয়াটি যেমন সংক্ষিপ্ত, তেমনি ব্যাপক অর্থবহ।
আল্লাহর নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। নিয়মিত এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমরা যেমন আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, তেমনি ভবিষ্যতের যেকোনো বঞ্চনা থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার এবং তা সংরক্ষণের তাওফিক দান করুন। আমিন।