আরাফার দিন ইসলামের অন্যতম পবিত্র দিন, যা হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দিনে হাজিরা মক্কার নিকটবর্তী আরাফাত ময়দানে সমবেত হন, যা হজের মূল রোকন হিসেবে বিবেচিত। আরাফার দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আরাফাতের দিনের তুলনায় উত্তম কোনো দিন নেই।
– (মাজমাউল জাওয়াইদ, হাদিস : ৩/২৫৬)
হাদিসে আরাফার দিনের রোজার বিশেষ মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। যেমন, এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহ পাকের কাছে আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা এক বছর আগের এবং এক বছর পরের অর্থাৎ দুই বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (তিরমিজি: ৭৪৯)
আরাফার দিনের বিশেষত্ব
উক্ত হাদিসে ‘আরাফার দিন’ বলতে ৯ জিলহজের কথা বলা হয়েছে। ৯ জিলহজ ‘আরাফার দিন’ বলার তিন কারণ বিজ্ঞ আলেমরা উল্লেখ করেছেন।
এক. ইবরাহিম (আ.) ৮ জিলহজ রাতে স্বপ্ন দেখেন যে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তানকে জবাই করছেন। কিন্তু স্বপ্নটির মর্ম সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারেননি, তাই চিন্তিত ছিলেন। তারপর ৯ জিলহজ পুনরায় ওই স্বপ্ন দেখার পর তার ব্যাখ্যা সুস্পষ্টরূপে বুঝতে ও চিনতে সক্ষম হন। ঘটনাটির স্মরণে ৯ জিলহজকে ‘আরাফার দিন’ বলা হয়।
কেননা ‘আরাফা’ শব্দের অর্থ হলো জানা, চেনা ইত্যাদি। (তাফসিরে বাগাবি ৭/৪৮)
দুই. জিবরাঈল (আ.) ৯ জিলহজে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে হজের আমলগুলো বিস্তারিত জানিয়েছেন। আর ‘আরাফা’ শব্দের এক অর্থ হলো জানা। তাই ৯ জিলহজকে ‘আরাফার দিন’ বলে। (আল-বিনায়া ৪/২১১)
তিন. এই দিনে হজযাত্রীরা হজের আমল হিসেবে ‘আরাফা’ প্রান্তরে অবস্থান করেন। তাই ৯ জিলহজকে ‘আরাফার দিন’ বলা হয়। (আল-ইনসাফ ৩/২৪৪)
এ আলোচনায় স্পষ্ট হলো যে আরাফার দিনের নামকরণের একমাত্র কারণ ‘আরাফা’ প্রান্তরে অবস্থান নয়, বরং অন্য কারণও রয়েছে। তাই এই দিনকে সব দেশের ক্ষেত্রে আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে নির্ধারিত করা ঠিক নয়, বরং ৯ জিলহজ হলো ‘আরাফার দিন’। এখন যে দেশে যেদিন জিলহজের ৯ তারিখ, ওই দেশের ‘আরাফার দিন’ সেটিই। হজযাত্রীদের আরাফার ময়দানে অবস্থানের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।
আরাফার রোজা প্রত্যেক দেশের ৯ জিলহজে
উপরোক্ত হাদিসের ফজিলতপ্রাপ্তির জন্য সব দেশে অবস্থানরত মুসলিমরা নিজ নিজ দেশের তারিখ অনুসারে জিলহজের ৯ তারিখে রোজা রাখবে—ওই দিন হজযাত্রীদের আরাফায় অবস্থান হোক বা না হোক। কেননা এই রোজার সঙ্গে আরাফার ময়দানের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই হজযাত্রীদের জন্য হজ পালনের সুবিধার্থে আরাফার রোজা না রাখা উত্তম। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এরও আরাফায় অবস্থানকালীন রোজা না রাখার বর্ণনা বিশুদ্ধ হাদিসে আছে। (বুখারি, হাদিস : ১৯৮৮)
এর কারণ হলো, এই রোজার সম্পর্ক ৯ জিলহজ তারিখের সঙ্গে। যেদিন যে দেশে ৯ জিলহজ হবে, ওই দেশের জন্য সেটিই ‘ইয়াওমে আরাফা’। যেভাবে ঈদের ক্ষেত্রেও বিধান হলো আরবের সঙ্গে অন্য এমন দূরবর্তী দেশের জন্য ঈদ পালন বৈধ নয়, যার সঙ্গে আরবের তারিখে এক-দুই দিন পার্থক্য থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ১০৮৭)
এ ছাড়া আগে উল্লিখিত মুসলিম শরিফের হাদিসে যে আরাফার দিনের রোজা বলতে ৯ জিলহজের কথা বলা হয়েছে, তা অন্য হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জনৈকা স্ত্রী বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) ৯ জিলহজ তারিখে রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৭, নাসাঈ, হাদিস : ২৩৭২)