আগে আম্মা যখন ফোন করতেন আমি এক ধরনের বিরক্তি নিয়ে বলতাম “ইস আম্মার ফোন, কতক্ষণ যে কথা বলবেন আল্লাই জানে”। ফোন ধরার পর রাখার জন্য ব্যস্ত হয়ে যেতাম । এক সময় কোনরকম কথা শেষ করে রেখে দিতাম । আম্মা জিজ্ঞাসা করতেনঃ কবে ফোন করবা?
আমি বলতামঃ করবনে আম্মা, তাড়াতাড়ি করবো ।
আমি আর ফোন করতাম না, আম্মাই কয়দিন পরে আবার ফোন করতেন ।
একসময় আম্মার যখন অসুস্থতা আরও বাড়লো, আম্মা শুনতেন না, তবুও ফোন করে কথা বলতে থাকতেন আমার সাথে । আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে বলতেই থাকতেন । কাজের মেয়ে মনোয়ারা আমার কিছু কথা ওনার কানের কাছে খুব জোরে বলে বুঝিয়ে দিতো ।
**
এখন যখন বাসায় একেবারে একা থাকি, আমার কোথাও ফোন করার থাকেনা, আমি কোথাও ফোন করিনা, আমার কাছেও কোন ফোন আসেনা । শুধু প্রফেশনাল দরকার ছাড়া আর কেউ আমাকে ফোন করেনা । আম্মার তাজমহল রোডের ফোন নম্বরটা আর ওঠেনা আমার ডিসপ্লেতে । কি শান্তি, তাইনা?
**
ওদের বাবা আছে, মা আছে, কত কথা বলার লোক আছে । একাধারে ৪/৫ ঘণ্টা কথা বলার মত কথা আছে । ওদের শান্তি বলার, অশান্তি বলার, সুখ বলার, অসুখ বলার লোক আছে, আমার আর কোন বলা নাই আর শোনাও নাই, শুধু একা নিরবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা আছে । নীরবতা আছে, পিনপতন নীরবতা ।
**
২০১২ তে যখন শেষদিন আম্মাকে দেখতে আম্মার ১৫/১৩ তাজমহল রোডের বাসায় গিয়েছিলাম, আম্মা বলেছিলেনঃ
আর কি দেখা হবে?
আমিঃ কেন হবেনা আম্মা, অবশ্যই হবে, এইতো সামনের বছরই আসব ।
আম্মাঃ না আর দেখা হবেনা ।
আম্মার শেষ কথাটা আমার কানে আর ঢোকে নাই, আমার তখন ব্যস্ততা কতক্ষণে আম্মার ঘর থেকে বেরিয়ে আসবো । কতক্ষণে প্লেনে চড়ে বসবো সপ্নের দেশে উড়ে যাওয়ার জন্য ।
আম্মা ওনার কথা রেখেছিলেন, আর কোনদিনও দেখা হয় নাই, উনিও স্বপ্নের দেশে উড়ে চলে গিয়েছিলেন আমার মাথায় শেষ হাতটা বুলিয়ে । আম্মা আই মিস ইউ ভেরি মাচ, এভ্রি সিঙ্গেল মোমেন্ট, ইন এভ্রি সিঙ্গেল ব্রেথ ।
লিখেছেন কানাডা প্রবাসী আশিকুজ্জামান টুলু।
জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার।
নব্বই দশকের ব্যান্ড চাইম এর পেছনের কারিগর তিনি। পরবর্তীতে নিজেই গড়ে তোলেন ব্যান্ড আর্ক।