বিশেষ দিন, ঘটনা বা ব্যক্তির স্মরণে সার্চ ইঞ্জিন গুগল তাদের হোমপেজের লোগোতে পরিবর্তন নিয়ে আসে যা গুগল ডুডল নামে বেশ জনপ্রিয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন এর সম্মানার্থে প্রথমবারের মতো এনিমেটেড ডুডল প্রকাশ করার পর, ২০১৪ সাল পর্যন্ত গুগল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মিলে মোট ২০০০ এরও বেশি ডুডল তাদের হোম পেজে প্রদর্শন করেছে।
বাংলাদেশের তিনজন খ্যাতনামা কবি গত দুবছরে গুগল ডুডল হয়েছেন। তারা হলেন শামসুর রাহমান, সুফিয়া কামাল এবং কামিনী রায়।
গত বছর শামসুর রাহমানের জন্মবার্ষিকীতে গুগল ডুডল ছিল- সাদা চুল, চোখে চশমা, হাতে ঘড়ি- এক হাত গালে দিয়ে আরেক হাতে লিখছেন কবি। ছবিটিতে ক্লিক করলে তা চলে যায় শামসুর রাহমানের সার্চের পাতায়। সামনে এসে পড়ে কবি সম্পর্কে নানা তথ্য। ডুডল পেজে কবির ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার শেষ তিন লাইনের ইংরেজি অনুবাদ তুলে ধরা হয়ঃ
‘’স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।‘’
এ ছাড়া সেখানে কবির জীবনবৃত্তান্তও দেখানো হয়।
এ বছর সুফিয়া কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ডুডল প্রদর্শন করে গুগল- চশমা ও শাড়ি পরিহিত কবি সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতি। কবির প্রতিকৃতির পিছনে সবুজ বর্ণে লেখা গুগল। ডুডল পেজে কবিকে নিয়ে লেখা হয়ঃ
সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি দীর্ঘ কর্মজীবনে সুফিয়া কামাল মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন, নারীমুক্তির আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫৬ সালে ‘কচি-কাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬১ সালে ছায়ানটের সভাপতি, ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের সময় মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি, ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ গঠন এবং ওই সময়ে অসহযোগ আন্দোলনে নারী সমাজের নেতৃত্ব দেন।
‘’ঘরে আটকে রেখে সমাজে ন্যায্য অবস্থান থেকে কেন বঞ্চিত করা হবে মহিলাদের?’’, কামিনী রায়ের এ প্রশ্ন দিয়েই শুরু হয় তাকে নিয়ে ডুডল পেজ।
কিছুদিন আগে কামিনী রায়ের জন্মদিবসে তাঁর ছবি গুগল ডুডলে ব্যবহার করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানায় গুগলঃ জল রঙে, সিপিয়া টোনে বই হাতে এক তরুণীর ছবি। পিছনে সারি সারি মহিলার অবয়ব। কবির হাতে বই, তাতে লেখা তার বিখ্যাত কবিতার নাম- কত ভালবাসি।
মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর পাঠকদের জন্য কামিনী রায়ের ‘কত ভালবাসি’ কবিতাটি দেয়া হলঃ
জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-
“মা, তোমারে কত ভালোবাসি!”
“কত ভালবাস ধন?” জননী শুধায়।
“এ-ত।” বলি দুই হাত প্রসারি’ দেখায়।
“তুমি মা আমারে ভালবাস কতখানি?”
মা বলেন “মাপ তার আমি নাহি জানি।”
“তবু কতখানি, বল।”
“যতখানি ধরে
তোমার মায়ের বুকে।”
“নহে তার পরে?”
“তার বাড়া ভালবাসা পারি না বাসিতে।”
“আমি পারি।” বলে শিশু হাসিতে হাসিতে!