আমদানি বেড়েছে, তবু চালের দাম চড়া

আমদানি বেড়েছে, তবু চালের দাম চড়া

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা হলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৮ লাখ ২০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে, তবু খুচরা বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব নেই। বরং দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে চালের আমদানি ২০৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

ঢাকার বাজারে মোটা গুটিস্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, মাঝারি পাইজাম ও ব্রি-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬৪ টাকায়, আর মিনিকেটের মতো সরু চালের দাম ৮২ থেকে ৯০ টাকা কেজি। গত রমজান থেকে এই দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অভ বাংলাদেশ-এর (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন সরু চালের দাম ১১.৩৫ শতাংশ বেশি। মাঝারি ও মোটা চালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৮.৮৫ শতাংশ ও ২.৯৪ শতাংশ।

পাইকাররা আশা করছেন, বোরো মৌসুমের চাল বাজারে এলে দামে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. শাওন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড কে বলেন, ‘রমজানে দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, এরপর আর কমেনি। এখন বোরোর চাল আসছে, সামনে হয়তো দাম কমবে।’

২০২৩-২৪ অর্থবছরে চাল আমদানি না হলেও এর আগের বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০.৫৬ লাখ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯.৮৮ লাখ টন ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩.৫৯ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছিল।

তবে আমদানিকারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়ায় দেশের বাজারে আমদানির প্রভাব কম পড়ছে। চাল আমদানিকারক ও মিলার চিত্ত মজুমদার বলেন, ‘চাল আমদানি করে লাভ হয় না। স্বর্ণা চাল আমদানি করতেই কেজিতে ৫০-৫১ টাকা খরচ পড়ে। তার সঙ্গে পরিবহনসহ নানা খরচ মিলিয়ে লাভ থাকে না। বিশেষ করে মাঝারি বা মোটা চালের ক্ষেত্রে কোনো লাভই থাকে না।’

চলতি মৌসুমে সরকার ধানের সংগ্রহমূল্য কেজিপ্রতি ৪ টাকা বাড়িয়ে ধানের জন্য ৩৬ টাকা এবং সিদ্ধ চালের জন্য ৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছে। সংগ্রহের লক্ষ্য ৩.৫ লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ টন চাল। প্রথাতভাবেই ফসল কাটার সময় চালের দাম কমে। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী আশঙ্কা করছেন, সরকারের ক্রয়মূল্য বাড়ায় এ বছর চালের দাম বেশিই থাকবে।

কারওয়ান বাজারের আরেক পাইকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার দাম বাড়িয়েছে, তাই বোরোর চালও দাম খুব একটা কমাতে পারবে না।’

গত কয়েক মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ধানের ফলন হলেও—আমন মৌসুমে ১.৭১ কোটি টন ও বোরো মৌসুমে ২.১০ কোটি টন—ভোক্তারা মানুষ এর সুফল পায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারি মজুতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

গত নভেম্বরে সরকারিভাবে মজুত কমে যাওয়ায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। পরে আমদানি শুরু হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম চড়া থাকায় দেশের বাজারে এই আমদানির প্রভাব পড়েনি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি মজুত ৯.৪৯ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিবিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম টিবিএস কে বলেন,
‘সরকারি মজুত কমলে মিল পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়। আমদানি যদি আরও আগে শুরু হতো, তাহলে এতটা দাম বাড়ত না। টাইমিংটাই আসল।’

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন দফা ভয়াবহ বন্যার ফলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার পর সরকার খাদ্য মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি এবং বাজার স্থিতিশীল করার জন্য আমদানি বাড়িয়েছে। গত বছর তিন দফা বন্যা হয়েছিল; যা আমাদের চাল উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঊর্ধ্বতন খাদ্য কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘খুচরা বাজারে সরবরাহের সম্ভাব্য ধাক্কা বা দাম বৃদ্ধি রোধ করতে, সরকার বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করে খাদ্য মজুত জোরদার করেছে।’
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, মার্চ মাসে চাল ও গমসহ সরকারি খাদ্য মজুতের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ লাখ টন। সরকার সাধারণত খোলা বাজারে বিক্রয় (ওএমএস), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং জরুরি ত্রাণ কর্মসূচির জন্য কমপক্ষে ১০ লাখ টন মজুত রাখে।

Comments (0)
Add Comment