আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে, আমদানি ব্যয়ে আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিট রিজার্ভ বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার এবং গ্রস রিজার্ভ বেড়েছে ২৩ কোটি ডলার। চলতি ডিসেম্বরের ২০ দিনের হিসাবেও নিট রিজার্ভ বেড়েছে ১০০ কোটি ডলার। তবে চলতি অর্থবছরের ৫ মাস ২০ দিনের হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১ হাজার ৮০ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। কারণ, এ সময়ে আরও কিছু বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পাওয়া যাবে। এছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।
আমদানি কমায় বৈদেশিক মুদ্রার খরচও কিছুটা কমছে। এ মাসে বৈদেশিক ঋণ শোধের বড় ধরনের কোনো কিস্তি নেই। ফলে রিজার্ভ বাড়ছে। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) গত নভেম্বর-ডিসেম্বর- এ দুই মাসের দেনা বাবদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ কমে যাবে। এদিকে আইএমএফও যে পূর্ভাবাস দিয়েছে, তাতে আগামী জুনের মধ্যে নিট রিজার্ভ আরও কমে সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলারের মতো থাকবে।
সূত্র জানায়, ১৫ ডিসেম্বর আইএমএফ-এর ঋণের ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার এবং রোববার এডিবির ঋণের ৪০ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সের কিছু ডলারও রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এতে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ২৬০৫ কোটি ডলার এবং নিট রিজার্ভ ২০৬৮ কোটি ডলারে উঠেছে।
রোববার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৫৮২ কোটি ডলার এবং নিট রিজার্ভ ২০৪০ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গ্রস রিজার্ভ বেড়েছে ২৩ কোটি ডলার এবং নিট রিজার্ভ বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ আরও কম রয়েছে বলে আইএমএফ মনে করে।
নভেম্বরের রিজার্ভ আরও কমে গিয়েছিল। ৩০ নভেম্বর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪৬৬ কোটি ডলার। নিট রিজার্ভ নেমেছিল ১৯১৩ কোটি ডলারে। অর্থাৎ ওই সময়ে গ্রস রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন (১০০ কোটিতে এক বিলিয়ন) ও নিট রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গিয়েছিল। এখন তা বেড়ে গ্রস রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন এবং নিট রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে উঠেছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৫১৫ কোটি ডলার। জুলাইয়ের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১২০ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, চলতি মাসের ১৫ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৭ কোটি ডলার। মাসের শেষের দিকে এটি আরও বাড়তে পারে। ফলে মাস শেষে রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় এলসি খোলা ও দায় পরিশোধ কমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি ব্যয় কমেছে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নতুন এলসি খোলা কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। এসব কারণে ডলারের খরচ কমেছে। তবে আগামী রোজা ও গরমকালের জন্য আবার আমদানি বাড়বে। ওই সময়ের জন্য ভোগ্যপণ্যসহ জ্বালানি আমদানি বাড়াতে হবে। তখন ডলারের খরচও বাড়বে। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ শোধের পরিমাণও নতুন বছরে বাড়বে।
এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে গ্রস রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এরপর থেকে রিজার্ভ কমছে। আইএমএফ ও এডিবির ঋণের কিস্তির কারণে রিজার্ভ এখন সাময়িকভাবে বেড়েছে। নতুন বছরে তা আরও কমে যাবে।