টানা তৃতীয় মাসের মতো দেশের সামগ্রিক আমদানিতে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে, রপ্তানিও বাড়তে পারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সার্বিক আমদানি বেড়েছে দুই দশমিক শূন্য চার শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল ২০ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
গত অক্টোবরে আমদানি বেড়েছে তিন দশমিক ১১ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ কম।
করোনা মহামারির সময় দেওয়া বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশে আমদানি খরচ বাড়তে শুরু করে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এই খরচ আরও বেড়ে যায়। এটি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিলে তা আরও মন্দা সৃষ্টি করে। অন্তর্বর্তী সরকার এই বিধিনিষেধগুলো ধীরে ধীরে তুলে নিতে শুরু করেছে।
বিনিয়োগকারী ও অর্থনীতিবিদরা জানান, জুলাই ও আগস্টে দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমদানি কমলেও চলতি অর্থবছরে আমদানি বাড়তে শুরু করেছে।
অর্থনৈতিক গতিশীলতার পরিমাপক সরবরাহকারী পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) তিন মাস কমার পর গত দুই মাসে কৃষি, পণ্য উৎপাদন ও সেবা খাতের আয় বাড়ছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের (পিইবি) তথ্য বলছে, নভেম্বরে পিএমআই এক মাস আগের তুলনায় সাড়ে ছয় শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৬২ দশমিক দুই পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের (পিআরসিআই) চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে, নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা থেমে গেছে। নতুন বিনিয়োগ না হলে কাজের সুযোগ বাড়বে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এলসি নিষ্পত্তির তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে নয় দশমিক শূন্য চার শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশ কম।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ডলার সংকটের মধ্যে ঋণপত্রে বিধিনিষেধ থাকায় ব্যবসায়ীরা গত অর্থবছরে কাঁচামাল আমদানি করতে পারেননি। তবে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলে যাচ্ছে। তাই কাঁচামাল আমদানি কিছুটা বেড়েছে। তারপরও একে ‘নগণ্য’ আখ্যা দিয়ে আশাবাদী হওয়ার কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, গত অর্থবছরে রপ্তানি নয় শতাংশ কমে যাওয়ায় এই প্রবৃদ্ধি নগণ্য।
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধির আরেকটি দিক হলো কার্যাদেশ বেড়েছে কিনা তা বিশ্লেষণ করা। এক্ষেত্রে তা হয়নি। বিদ্যমান শিল্পের প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও নতুন বিনিয়োগ কম।
তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৪১ শতাংশ। এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ২১ শতাংশ।
নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত নতুন করে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন তিনি।
প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির অভিজ্ঞতা নেই। যদি আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে তবে নতুন বিনিয়োগ আসতে আরও এক বছর সময় লাগবে। কারণ ব্যবসায়ীরা সরকারের নীতি পর্যবেক্ষণ করতে সময় নেবে।
তার মতে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।