আন্দোলনে স্থবির রাজধানী: সায়েন্সল্যাব-আগারগাঁও- শাহবাগে তীব্র যানজট

ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, আগারগাঁও, শাহবাগ ও শিক্ষা ভবনের সামনে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের কারণে আজ রবিবার সকাল থেকেই এসব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দীর্ঘ সারির যানবাহন আটকে পড়ে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। অফিসগামী, শিক্ষার্থী, রোগীসহ নানা কাজে বের হওয়া মানুষজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকেন।

সকালে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) সংস্কারসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের সামনে মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেন। তাদের অবস্থানের কারণে ভবনসংলগ্ন সড়ক একপাশ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিচ্ছিন্নভাবে আরও কয়েকজন বিক্ষোভকারী সড়কের অন্য পাশেও দাঁড়িয়ে থাকায় পুরো সড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ফলে জাতীয় আর্কাইভ ভবনের সামনের রাস্তা, শ্যামলী ও আগারগাঁওয়ের আশপাশের সড়কগুলোতে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়। গাড়ি ঘুরিয়ে দিতে থাকেন দায়িত্বশীলরা, কিন্তু বিকল্প রুটেও তীব্র জট তৈরি হয়।

যানজটে আটকে থাকা এক মোটরসাইকেল আরোহী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বলা নেই, কওয়া নেই, হুট করে রাস্তা বন্ধ। এভাবে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলার মানে হয় না।’ আরেক সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, ‘এভাবে আন্দোলনের কোনো মানে নেই। এমনিতেই ঢাকায় সারাদিন জ্যাম থাকে। এখন যাখন-তখন যে কেউ সড়ক বন্ধ করে দিলে আমরা গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হই। আজ সারাদিনের ভাড়াটাই তুলতে পারব না মনে হচ্ছে।’

শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির জানান, এখনও আন্দোলন চলছে। সড়কে যানজট রয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। তবে বিক্ষোভকারীদের অবস্থানের কারণে পুরো এলাকা যানজটে নাকাল।

এদিকে প্রায় একই সময়ে ঢাকা কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তারা কর্মসূচি স্থগিত করলে শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে চলে গেছেন। শাহবাগ এলাকায় পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। তবে শিক্ষা ভবনের সামনে এখনও কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান করায় সেখানে যানজট রয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

একই সময়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পদযাত্রা ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে শিক্ষা ভবন অভিমুখে অগ্রসর হন। তাদের কর্মসূচির কারণে সচিবালয়মুখী সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এতে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা বহু যাত্রীকে হেঁটে বিকল্প রুট ধরে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।

এছাড়া কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দাবিতে ঢাকা কলেজসহ একাধিক কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ করে আসছেন। আজও তারা ক্যাম্পাস ও আশপাশের সড়কে বিক্ষোভ করায় সেখানেও যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও দিনের বেশিরভাগ সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলে।

রাজধানীর একাধিক সড়কে দীর্ঘ লাইনে আটকে থাকা মানুষের অভিযোগ—অনিয়মিত, আকস্মিক আন্দোলন দিনব্যাপী জীবিকার সংগ্রামকে কঠিন করে তোলে। যাত্রীরা জানান, সকালে শুরু হওয়া চাপ দুপুর হয়ে গেলেও অনেক সড়কে যানজটের প্রভাব ছাড়তে সময় লেগেছে। দায়িত্বশীলদের মতে, বিক্ষোভকারীরা পূর্বঘোষণা না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থাপনা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

সড়কে আটকে থাকা একজন যাত্রী বলেন, ‘আজ কারও কথা নয়, ভোগান্তি আমাদের। সকাল থেকে রাস্তায় আছি।’ সাধারণ মানুষের এমন ভোগান্তির মধ্যেও আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন—দাবি পূরণ না হলে তারা আবারও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।