কলকাতায় খুন হওয়া আওয়ামী লীগের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের সংসদীয় আসন এখনই শূন্য ঘোষণা করা হচ্ছে না। কারণ, তাঁর মৃত্যুর সংবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংসদ সচিবালয়কে এখনও কোনো পক্ষ জানায়নি। শুধু গণমাধ্যমের খবরের ওপর ভিত্তি করে কোনো আসন শূন্য ঘোষণা করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংসদের আইন শাখার কর্মকর্তারা।
তবে বিষয়টি আগামী ৫ জুন দ্বাদশ সংসদের তৃতীয় অধিবেশন শুরুর আগেই ফয়সালা হবে এমন আশা প্রকাশ করে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ঘটনাটি ব্যতিক্রম। অতীতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। এ জন্য জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে আরও অপেক্ষা করা হবে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ১৩ মে রাতে খুন করা হয় আজীমকে। হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশের দিনই (২২ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম (লিটন) নিজ বাড়িতে খুন হন। তারও আগে আহ্সান উল্লাহ্ মাস্টার সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় খুন হন। তবে তাদের মরদেহ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল না। মৃত্যুর পরপরই সংসদ সচিবালয় আসন শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করে।
সংসদ সদস্য মারা গেলে কিংবা অনুমতি ছাড়া ৯০ কার্যদিবস সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে পদ শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে জানায় সংসদ। নির্বাচন কমিশন ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করে। সাধারণত কোনো সংসদ সদস্যের মৃত্যুর এক সপ্তাহের মধ্যেই আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। সংসদ সদস্য মারা গেলে স্পিকার শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করেন। সংসদের অধিবেশন চলাকালে কেউ মারা গেলে ওই দিনের জন্য অধিবেশন মুলতবি করার রেওয়াজ আছে।
আজীমের সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। আমরা আরও অপেক্ষা করব। কারণ এ ঘটনা খুবই ব্যতিক্রমধর্মী। আমাদের সামনে কোনো নজির নেই। কার্যপ্রণালি বিধিতেও এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।’
এর আগে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া এমপিদের মধ্যে শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন প্রসঙ্গ টেনে স্পিকার বলেন, তাদের হত্যার পর মরদেহ পাওয়া নিয়ে কোনো জটিলতা হয়নি এবং জানাজা হয়েছে। সেই হিসেবে তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন সরকারের পক্ষ থেকে না জানালেও সংসদ নিশ্চিত হয়েছিল যে তারা মারা গেছেন। কারণ সবই চোখের সামনে ঘটেছিল। কাজেই সেসব ঘটনার সঙ্গে এটিকে মেলানোর কোনো সুযোগ নেই।
স্পিকার আরও বলেন, ‘এখানে সমস্যা হচ্ছে, তাঁর দেহ পাওয়া যায়নি। আমাদের কোনো একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে জানতে হবে। ওনার মৃত্যুসনদ বা কোনো কাগজ আমাদের কাছে আসতে হবে। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।’
আজীমের আসন শূন্য ঘোষণার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়– তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে, আলোচনা চলছে। আগামী ৫ জুন সংসদ অধিবেশনের আগে কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে, সেখানে আলোচনা করবেন বলেও জানান স্পিকার। ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে বলেও আশা করেন স্পিকার।