আগামী ২ বছরে চীন, ভিয়েতনামের চেয়েও বাংলাদেশ বেশি অর্ডার পাবে

আমেরিকান ফ্যাশন শিল্প

মার্কিন ফ্যাশন কোম্পানিগুলো যেসব দেশ বা অঞ্চল থেকে আগামী দুই বছরে তাদের সোর্সিং ভ্যালু বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সেসব দেশের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ভারত, এরপর সিএএফটিএ-ডিআর অঞ্চল। এক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ।

ইউএসএফআইএ ২০২২ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি অনুসারে, অর্ধেকেরও বেশি মার্কিন পোশাক নির্বাহী আগামী দুই বছরে চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং অন্যান্য প্রতিযোগীদের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে সোর্সিং বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

ইউনাইটেড স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএফআইএ) এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ৫৫ শতাংশ ইউএস অ্যাপারেল এক্সিকিউটিভ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সোর্সিং বাড়ানোতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরমধ্যে প্রায় ৩ শতাংশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সোর্সিং বাড়ানোর আশা করেন।

মার্কিন ফ্যাশন কোম্পানিগুলো যেসব দেশ বা অঞ্চল থেকে আগামী দুই বছরে তাদের সোর্সিং ভ্যালু বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সেসব দেশের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ভারত, এরপর সিএএফটিএ-ডিআর অঞ্চল। এক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ।

সিএএফটিএ-ডিআর বা ডোমিনিকান রিপাবলিক-সেন্ট্রাল আমেরিকা এফটিএ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ছোট উন্নয়নশীল অর্থনীতির গ্রুপ – কোস্টারিকা, এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া এবং ডোমিনিকান রিপাবলিকের মধ্যে প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।

এই তালিকায় বাংলাদেশের পরই রয়েছে মেক্সিকো। মার্কিন ক্রেতাদের সোর্সিং বাড়ানোর পরিকল্পনায় পঞ্চম অবস্থানে যৌথভাবে আছে ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনাম।

প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, এই গবেষণার প্রতিবেদনটি যৌক্তিক।

তিনি বলেন, মার্কিন ক্রেতারা নিশ্চিত যে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে মৌলিক পণ্য ছাড়াও অন্যান্য গার্মেন্টজাতীয় পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। বর্তমানে তারা বাংলাদেশ থেকে নিটওয়্যার পণ্যের জন্য প্রচুর অর্ডার দিচ্ছে। ফলে গত কয়েক মাসে এই বাজারে বাংলাদেশের আরএমজি পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫০ শতাংশের বেশি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভারতের নিজস্ব কাঁচামাল রয়েছে, তাই তারা তুলনামূলক কম দামে কাপড় রপ্তানি করতে সক্ষম। এ কারণে তারা ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।

৩০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা, আমদানিকারক এবং পাইকারি বিক্রেতাদের উপর চালানো সমীক্ষাই হলো ইউএসএফআইএ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি। এরমধ্যে দেশটির কয়েকটি বৃহত্তম ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারাও রয়েছে।

সমীক্ষায় ৮৫ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা চীন থেকে সুতি পোশাক আমদানি কমানোর পরিকল্পনা করছেন। এদিকে ৪৫ শতাংশ বলছেন, তারা নন-কটন পোশাক আমদানি আরও কমিয়ে দেবেন।

মার্কিন ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর জন্য শীর্ষস্থানীয় সোর্সিং বেস এশিয়া।

২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি পোশাক সোর্সিং গন্তব্যের তালিকায় থাকা শীর্ষ দশের বেশিরভাগই এশিয়া ভিত্তিক। এরমধ্যে প্রথমেই রয়েছে চীন (৯১%); এরপর ভিয়েতনাম (৮৮%), বাংলাদেশ (৮৪%) এবং ভারত (৭২%)।

‘চীনের এক্সপোজার’ কমানো মার্কিন ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর সোর্সিং বৈচিত্র্যকরণ কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এক-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা এই বছর চীন থেকে ১০ শতাংশেরও কম পোশাক পণ্যের সোর্সিং এর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।

এছাড়াও, ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা ২০২২ সালে চীনের চেয়ে ভিয়েতনাম থেকে বেশি উৎসের পরিকল্পনা করছে।

ফ্যাশন ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত হওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রায় সব উত্তরদাতা বলেন, শিপিং বিলম্ব এবং সাপ্লাই চেইন ব্যাঘাত ২০২২ সালে তাদের শীর্ষ ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি।

৯৫ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতার মতে, উইঘুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট (ইউএফএলপিএ) বাস্তবায়ন তাদের কোম্পানির সোর্সিংকে প্রভাবিত করবে।

বেশিরভাগ উত্তরদাতার (৯২ শতাংশের বেশি) চীন ছাড়া এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে পোশাকের উৎস কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।

প্রায় ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা ইউএফএলপিএ এর প্রতিক্রিয়ায় ‘এশিয়ার বাইরে নতুন সোর্সিং গন্তব্য খুঁজবেন’ বলে জানান।

ইউএসএফআইএ ‘নেতৃস্থানীয়’ মার্কিন ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর ৩৪ জন নির্বাহীর একটি সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে তাদের নতুন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এরমধ্যে ৮১ শতাংশ কোম্পানিতে এক হাজারেরও বেশি কর্মচারী রয়েছে।

সমীক্ষার অংশগ্রহণকারী প্রায় ৭০ শতাংশ খুচরা বিক্রেতা, ৬৭ শতাংশ আমদানিকারক এবং পাইকারী বিক্রেতা; বাকি ৪০ শতাংশ ব্র্যান্ড।

এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে এ সমীক্ষা চালায় ইউএসএফআইএ।

Comments (0)
Add Comment