রাষ্ট্রীয় মদদে গুম-খুন ও অপহরণের অন্ধকার অধ্যায় তৈরি হয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা। নিরাপদ বাংলাদেশ তৈরিতে নজিরবিহীন এই অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শাসনামলে দেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ২ হাজার ৬৯৯ জন। ২০২৪ এ গণহত্যা যোগ করলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ হাজারে। ঘটনার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নির্বাচনের আগে বিচার বহির্ভূত হত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
জোর করে ক্ষমতা দখল ও ভয়ের সংস্কৃতি কায়েম করতেই খুন-গুম করা হয়েছে বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর। গোপন বন্দিশালা উন্মুক্ত করার দাবি তাদের।
মায়ের ডাক সংগঠনের সানজিদা আক্তার তুলি বলেন, ‘এত অত্যধিক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘন আমার মনে হয় ইতিহাসে আমাদের আশেপাশেও কোথাও হয় নি। প্রতিটা নির্বাচনের আগে এটা এত বড় আকারে করা হয় যে মানুষ চুপ হয়ে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘তৎকালীন আওয়ামী অপশক্তির উপরের কিছু মানুষ হয়ত চলে গেছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে কাঠামো তো এখনো রয়েছে।’
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করা হয়েছে কঠোরভাবে। বন্ধ বা দখল করে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে গণমাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শেখ হাসিনা বা শেখ মুজিব বিরোধী বক্তব্য দেয়ায় মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বেছে নেয়ার অধিকার পায়নি জনগণ।
নূর খান বলেন, ‘এরকম একটা অবস্থায় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য ধরে রাখার তারা সবদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। সমাজের ভয়ের সংস্কৃতি বহমান রাখা হয়েছে। যাতে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে টু শব্দটি না করতে পারে। কেউ যাতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘তারা এ ঘটনা ঘটাতে সাহায্য করেছেন, নির্দেশ দিয়েছেন এবং ঘটনার দায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা তার মন্ত্রী পরিষদ এড়াতে পারবেন না।’
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম সম্পর্কিত ধারা যুক্ত হওয়ার পরে প্রতিনিয়ত জমা হচ্ছে অভিযোগ। এখন পর্যন্ত ৭০টি গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তারেক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যেহেতু আমাদের এখন আইনি সুযোগ তৈরি হয়েছে, যারা যে অবস্থায় গুম হয়েছে আমরা চাইলে এটা অ্যাটেইন করতে পারব।’
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার বিচারের পর গুমের বিচারকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার Sনিশ্চিতের উল্লেখ থাকলেও গত ১৫ বছরে বার বার ক্ষমতার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছ মৌলিক মানবাধিকার।
শুধু ভিন্নমতের কারণে প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার করে এসব বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুনের ঘটনা ঘটেছে। যারা বারবার আদালতের বারান্দায় ঘুরলেও বিচার পাননি, কেউ বা মামলা করার সাহস পায়নি।
এখন সময় এসেছে প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো সরকার বা কোনো বাহিনীর লোক এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সাহস না পায়।