বাজারে আসছে আইফোন ১৬ সিরিজের নতুন মডেল। এই সিরিজের ‘আইফোন ১৬ই’ হবে তুলনামূলকভাবে কম দামের। এই ফোনটির মাধ্যমে টেক জায়ান্ট অ্যাপল বাজেট স্মার্টফোনের বাজারে তাদের উপস্থিতি আরও জোরদার করতে চাইছে।
আইফোন ১৬ই হলো প্রথম আইফোন, যেটিতে অ্যাপলের নিজেদের তৈরি করা সেলুলার মডেম ব্যবহার করা হয়েছে। সেলুলার মডেম মোবাইল ব্রডব্যান্ড মডেম বা ওয়্যারলেস মডেম নামে পরিচিত। এটি এমন একটি ডিভাইস যা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে ডিভাইসে।
অ্যাপল জানিয়েছে, এটি বাজারের সবচেয়ে কমদামি আইফোন। সেটিতে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স বা অ্যাপলের নিজস্ব এআই রয়েছে। ‘আইফোন ১৬ই’ কিনতে হলে ৫৯৯ ডলার খরচ করতে হবে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭২ হাজার টাকা। এখন থেকে ফোনটি প্রি-অর্ডার করা যাচ্ছে অ্যাপলের ওয়েবসাইটে। দুটি সুন্দর ম্যাট ফিনিশে পাওয়া যাবে কালো এবং সাদা রঙে। এর সঙ্গে বিভিন্ন রঙের কেস ব্যবহার করে ফোনটিকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাজানো যাবে। আর এটি ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে অ্যাপেল স্টোর ও অনলাইনে পাওয়া যাবে।
অ্যাপল যদি তাদের কম দামের আইফোনে এআই প্রযুক্তি ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ যুক্ত করে তাহলে তাদের তৈরি করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুল ও ফিচারগুলো আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে। অ্যাপল এআই প্রযুক্তিকে আরও জনপ্রিয় করতে চাইছে।
সম্প্রতি অ্যাপল বাজেট স্মার্টফোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উভয় ক্ষেত্রেই গুগল এবং স্যামসাংয়ের দিক থেকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। যেমন, গুগলের কম দামের পিক্সেল এ সিরিজের ফোনগুলো বাজারে খুব ভালো চলছে। গুগল এবং স্যামসাং উভয়েই গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোতে নতুন নতুন এআই ফিচার যুক্ত করে সেগুলো আরও উন্নত করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এর ফলে অ্যাপলকে বাজারে টিকে থাকতে হলে নিজেদের বাজেট ফোনগুলোতেও আধুনিক এআই ফিচার আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।
অ্যাপলের সিইও টিম কুক ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নতুন আইফোন ১৬ই কে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের আসছে নতুন সদস্য।’
অ্যাপলের ওয়ার্ল্ডওয়াইড আইফোন প্রোডাক্ট মার্কেটিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট কায়ান ড্র্যান্স বলেছেন, ‘আইফোন ১৬ই তে সেই সব ফিচার রয়েছে যা আমাদের ব্যবহারকারীরা আইফোন ১৬ লাইনআপে পছন্দ করবেন। যেমন, যুগান্তকারী ব্যাটারি লাইফ, সর্বশেষ প্রজন্মের এ১৮ চিপ দ্বারা চালিত দ্রুত কর্মক্ষমতা, ৪৮ মেগাপিক্সেলের টু ইন ওয়ান ক্যামেরা সিস্টেম এবং অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স। আমরা আইফোন ১৬ই কে একটি শক্তিশালী আরও সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে এই লাইনআপে যোগ করতে পেরে খুবই আনন্দিত। যেন আরও বেশি মানুষের কাছে আইফোনের অভিজ্ঞতা পৌঁছে দেওয়া যায়।’
আইফোন ১৬ই ফোনটি টেকসই করে তৈরি করা হয়েছে। এর টেকসই রেটিং মানে ইনগ্রেস প্রোটেকশন আইপি ৬৮। অর্থাৎ এটি পানি এবং ধুলা প্রতিরোধী। এর পর্দায় সিরামিক শিল্ড গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। যা অন্য যেকোনো স্মার্টফোনের গ্লাসের চেয়ে বেশি শক্ত। এমনকি এর পেছনের গ্লাসটিও খুব মজবুত। ফোনটিতে ৬.১ ইঞ্চি সুপার রেটিনা এক্সডিআর (XDR) ডিসপ্লে রয়েছে। যা ওএলইডি (OLED) প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি। এজ-টু-এজ ডিসপ্লেটি এইচডিআর (HDR) ভিডিও দেখা, গেম খেলা ও স্পষ্ট টেক্সট পড়ার জন্য খুবই ভালো।
আইফোন ১৬ই-র ব্যাটারি লাইফও অসাধারণ। ৬.১ ইঞ্চি আইফোনে এটিতেই সবচেয়ে বেশি ব্যাটারি লাইফ রয়েছে। এটি আইফোন ১ এর চেয়ে ৬ ঘণ্টা এবং আইফোন এসই এর চেয়ে ২ ঘণ্টা বেশি ব্যাটারি চলবে। ট্রুডেপ্ত (TrueDepth) ক্যামেরা সিস্টেম ও ফেস আইডি থাকার কারণে ব্যবহারকারীরা তাদের আইফোন সহজে নিরাপদে আনলক করতে, কেনাকাটার সময় পরিচয় প্রমাণ করতে এবং বিভিন্ন অ্যাপে সাইন ইন করতে পারবে। ওয়্যারলেস চার্জিং এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম মেনে ইউএসবি-সি পোর্ট উভয় সুবিধাই রয়েছে।
সব মিলিয়ে দুর্দান্ত হতে চলেছে আইফোন ১৬ই। তবে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মনে করছে, জেনারেটিভ এআই ও চ্যাটবট প্রযুক্তি পরবর্তী বড় ধাপ, যা প্রযুক্তি ব্যবহারের পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। তবে এটা এখনো নিশ্চিত নয় যে অ্যাপলের ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ এর মতো এআই টুলগুলো ব্যবহারকারীদের নতুন স্মার্টফোন কিনতে যথেষ্ট আগ্রহী করে তুলবে কিনা। কারণ অ্যাপলের আইফোন থেকে আয় ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ওয়াল স্ট্রিটের প্রত্যাশার চেয়ে কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: সিএনএন, অ্যাপল নিউজরুম