জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী আলবার্ট আইনস্টাইন তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিশেষত ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী আইনস্টাইনকে “শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি” হিসেবে ঘোষণা করে।
এছাড়া বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের একটি ভোট গ্রহণের মাধ্যমে জানা গেছে, তাকে প্রায় সবাই সর্বকালের সেরা পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। সাধারণ সংস্কৃতি এবং দৈনন্দিন ব্যবহারে মেধাবী এবং প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন কাউকে বা কোনো কিছুকে বুঝাতে এখন তাই “আইনস্টাইন” শব্দটি ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ এটি এখন মেধার সমার্থক।
বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে নিয়ে যেমন কৌতুহলের শেষ নেই, তেমনি তার ব্যক্তিজীবন নিয়েও উৎসাহের কমতি নেই তার ভক্ত-অনুরাগীদের। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর সৌজন্যে মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম এর পাঠকদের জন্য সেরকম অজানা কিছু তথ্যঃ
১. তিনি ১৬ বছর বয়সে তার জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন।
শৈশবকাল থেকেই আইনস্টাইন যে কোনও ধরনের জাতীয়তাবাদকে ঘৃণা করতেন এবং নিজেকে ‘বিশ্বনাগরিক’ বলতে পছন্দ করতেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি জার্মান নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন এবং ১৯০১ সালে সুইস নাগরিক হওয়ার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রহীন ছিলেন।
২. তিনি তার পদার্থবিদ্যার ক্লাসের একমাত্র নারী শিক্ষার্থীকে বিয়ে করেছিলেন।
জুরিখ পলিটেকনিকে আইনস্টাইনের বিভাগে মিলেভা ম্যারিক ছিলেন একমাত্র মহিলা শিক্ষার্থী। তিনি গণিত এবং বিজ্ঞানের অনুরাগী ছিলেন এবং একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদার্থবিদ ছিলেন। কিন্তু আইনস্টাইনকে বিয়ে করার পর তিনি তার এই উচ্চাভিলাষ ত্যাগ করেছিলেন।
৩. তার একটি অবৈধ বাচ্চা ছিল।
আইনস্টাইনের হবু স্ত্রী মিলেভা মারিচ ১৯৮০ সালে সার্বিয়ায় পরিবারের সাথে থাকার সময় একটি বিবাহবহির্ভূত কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। শিশুর নাম রাখা হয়েছিল লিজারেল এবং ইতিহাসবিদদের মতে বাচ্চাটি হয়তো শৈশবেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল, বা তাকে দত্তক দেয়া হয়েছিল। সমস্ত সম্ভাবনা অনুযায়ী আইনস্টাইন কখনও নিজের সেই মেয়েকে দেখেননি। আইনস্টাইনের চিঠির সংগ্রহটি সর্বসাধারণের জন্য ১৯৮৭ সালে উন্মুক্ত করার আগ পর্যন্ত মেয়েটির অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউ খুব একটা জানতো না।
৪. তিনি তার নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থ প্রথম স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য প্রদান করেছিলেন।
নোবেল পুরষ্কার পেতে যাচ্ছেন বুঝতে পেরে আইনস্টাইন তার প্রত্যাশিত পুরষ্কারের সমস্ত অর্থ তার প্রথম স্ত্রী মিলেভাকে দিয়েছিলেন, যেন তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ করতে রাজি হন। পুরষ্কারটি ছিল ৩২,২৫০ ডলার, যা তখনকার সময়ের একজন অধ্যাপকের গড় বার্ষিক বেতনের দশগুণেরও বেশি ছিল।
৫. তিনি তার ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করেছিলেন।
আইনস্টাইনের দ্বিতীয় স্ত্রী এলসা হলেন তার মায়ের বোনের মেয়ে, সে দিক দিয়ে তারা ফার্স্ট কাজিন। এলসার বাবা এবং আলবার্টের বাবা আবার কাজিন ছিলেন, সে দিক দিয়ে তারা সেকেন্ড কাজিন। অবিবাহিত অবস্থায় তার নামও ছিল আইনস্টাইন।
৬. একজন কথিত রাশিয়ান গুপ্তচরের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।
১৯৩৫ সালে আইনস্টাইনের পালিত কন্যা মারগোট তাকে মার্গারিটা কোনেনকোভার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তারা ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৮ সালে, কোনেনকোভাকে আইন্সটাইনের (১৯৪৫ থেকে ১৯৪৬) পাঠানো নয়টি প্রেমের চিঠি নিলাম করা হয়েছিল। একজন রাশিয়ান গুপ্তচরের লেখা বই অনুসারে, কোনেনকোভা ছিলেন একজন রাশিয়ান গুপ্তচর, যদিও ইতিহাসবিদরা এই দাবি নিশ্চিত করেন নি।
৭.তিনি খুব ভুলোমনা ছিলেন।
অত্যন্ত ভুলোমনা ব্যক্তি ছিলেন আইনস্টাইন। সাধারণ সব জিনিস এমনকি নিজ বাড়ির ঠিকানা পর্যন্ত ভুলে যাওয়াটাও খুব অস্বাভাবিক ছিলনা তার কাছে।
একবার ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন তিনি। টিকিট চেকার এসে তার টিকিট দেখতে চাইলে অনেক খোঁজাখুজির পরও টিকিট খুঁজে পেলেন না। শেষে আইনস্টাইনকে চিনতে পেরে টিকিট চেকার বললেন, আপনার টিকিট লাগবে না। কিন্তু তবুও টিকিট খুঁজতেই থাকলেন এই ভুলোমনা বিজ্ঞানী। চেকার এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিকিট না পেলে আমি কোথায় যাচ্ছি সেটা জানবো কি করে?
৮.গণিত আর বিজ্ঞান বাদে বাকি সব বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় কেবল গণিত আর বিজ্ঞান বাদে বাকি সবগুলো বিষয়ে ফেল মেরেছিলেন আইনস্টাইন।