অ্যাপস ছেড়ে চুক্তি: রাইড শেয়ারিংয়ে বাড়ছে ঝুঁকি, বিশৃঙ্খলা

নানা কারণে দিন দিন রাইড শেয়ারিং অ্যাপস থেকে মুখ ফিরিয়ে কন্ট্রাক্ট বা ভাড়ার দিকে ঝুঁকছেন রাইড শেয়ার করা চালকরা। আর অ্যাপে চালক সংকটসহ নানা কারণে যাত্রীরাও ঝুঁকছেন কন্ট্রাক্টে ভ্রমণে। ফলে যাত্রী-চালক উভয়েরই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাইড শেয়ারিং নীতিমালা বাস্তবায়নের অভাবেই ঘটছে এমনটা। এ নিয়ে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় বিআরটিএ।

যানজটের নগরী ঢাকায় অল্প সময়ের মধ্যে দূরের গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকেরই পছন্দের বাহন মোটরসাইকেল বা বাইক। এই সুযোগে রাজধানীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের ব্যবহার। তবে, ধীরে ধীরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে এই খাতে, যার বড় কারণ জনপ্রিয় এই অ্যাপ থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চালকরা। কন্ট্রাক্টে বা সরাসরি ভাড়া ঠিক করে রাইড শেয়ার করা যেন নিয়মে পরিণত করেছেন তারা। অজুহাত দিচ্ছেন, রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর কমিশনের নামে অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে তাদের কাছ থেকে।

এদিকে, অ্যাপে চালক খুঁজে না পাওয়ায় যাত্রীরাও আগ্রহ হারাচ্ছেন অ্যাপ ব্যবহারে। যাত্রীর গন্তব্য পছন্দ না হলে রাইড ক্যানসেল করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। তাই, অনেক সময় যাচ্ছেন কন্ট্রাক্টে।

চালকরা অ্যাপ ব্যবহার না করায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো। বাধ্য হচ্ছে তাদের পরিষেবা বন্ধ করতে। নিবন্ধিত ১৫টি কোম্পানির ১৩টি বার্ষিক লাইসেন্সও নবায়ন হয়নি।

এদিকে, অ্যাপ ব্যবহার কমায় নানাভাবে হেনস্থা হচ্ছেন যাত্রীরাও। ভাড়া নিয়ে দরদাম করার সময় কটূক্তিও শুনতে হয় কখনও। এছাড়া, যাচ্ছেতাই ভাবে গাড়ি চালানো, ত্রুটিযুক্ত বাইকে রাইড দেওয়াসহ নানা বিষয়ে ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, অ্যাপের বদলে কন্ট্রাক্ট রাইড শেয়ারিং এর কারণ।

ডিএমপির মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘সম্মানিত নগরবাসী যারা রয়েছেন তাদের অনুরোধ করবো আপনারা এসব রাইড এড়িয়ে চলবেন। ওঠার সময় অ্যাপ অনুসরণ করে উঠবেন। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমিয়ে দেবে।’

অ্যাপভিত্তিক যানবাহনকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে ২০১৭ সালে আইন করা হলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই, বিশৃঙ্খলই রয়ে গেছে এই খাত।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক বলেন, ‘বিআরটিএ যদি রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন করে থাকে তাহলে অন্যান্য দেশ তাকে জিজ্ঞাসা করতো। আইন অনুযায়ী তুমি কী কাজ করছো? তা কি জানো? না করলে তোমার দায়টা কোথায়। এই যে অ্যাকাউন্টিবিলিটি বা জবাবদিহিতার যে জায়গা সেটা আমাদের দেশে হয় নি।’

নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বলছে, অ্যাপভিত্তিক রাইডিংয়ে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব পক্ষের সাথে শিগগিরই বসবে বিআরটিএ।

বিআরটিএর প্রকৌশল পরিচালক সিতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এটা আসলে খুব একটা কার্যকর না। মাঝে মাঝে এটা করে থাকি। রাইড শেয়ারিং কোম্পানির কাছে আমরা প্রস্তাব চেয়েছি, যে তাদের কী প্রস্তাব, কীভাবে আমরা সাহায্য করতে পারি।’

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, যানজটের এ নগরীতে পাঁচ লাখের মতো এবং সারাদেশে আরও প্রায় ১২ লাখ মোটরযান রাইড শেয়ারিং করে চলে। যার অধিকাংশই অ্যাপের বিপরীতে চলে কন্ট্রাক্টে। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়,অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত আছে ২৮ হাজারের মতো মোটরযান রাইডার।

Comments (0)
Add Comment