অল্পসল্প খাবারের গল্প

নুসরাত সুমাইয়া

খাবারের প্রতি বরাবরই এক ধরনের আবেগ কাজ করে। বোর্ড পরীক্ষার আগের দিনও নিজ হাতে পাস্তা বানিয়ে সেটা রান্না করা তা না হলে সম্ভব ছিল না। মায়ের বকুনি খেলেও এসবে কখনো কোন বাধা পাইনি। বলা চলে, রান্নার উৎসাহ এবং মসলার মেলবন্ধনের জ্ঞান এসেছে মায়ের কাছ থেকেই।


মায়ের বানানো প্রিয় কিছু খাবার

বিশেষ কিছু উৎযাপনের মূল আকর্ষণ হল খাবার। ছোটবেলা থেকেই মায়ের হাতের সব কিছুই অমৃত মনে হয়। একটা সময় মনে হতো বাইরের খাবারের চেয়ে ভালো আর কিছু বোধ হয় নেই।কিন্তু দিন যেতে যেতে এখন বাসায় বানানো যে কোন খাবারই সবচেয়ে ভালো লাগে। বলা যায় দেশের বাইরে সার্ভাইব করতে পেরেছি শুধু নিজে কিছু না কিছু রান্না করতে পারি বলে।
পর্যটন নগরী হকশোবাজারত (কক্সবাজারে) কর্মের সুবাদে প্রায়ই বাইরে খাওয়া হয়। এত পর্যটকের শহরে খাবারের মান ভালো এরকম জায়গা হাতে গোনা কয়েকটা। তাই আমার চেষ্টা থাকে ভালো কোনো ডিশের খোঁজ পেলে তা পরিচিতদের জানানো।

কক্সবাজারের “রান্নাঘর” রেস্তোরায় আপনি পাবেন মাত্র ১৫০ টাকায় দশ রকমের ভর্তা আর শাক এবং সাথে সবজি ভাজি-ও! এর সাথে শুধু ডাল হলে দুজন মানুষের উদরপূর্তি হয়ে যায় বেশ ভালোভাবেই।
 
কক্সবাজারে আসা সবাই কমবেশি “শালিক রেস্টুরেন্ট” এর নাম শুনেছেন।
যদি না শুনেন, তাদের নিহারী হালিম হচ্ছে পরিপূর্ণ ডিলাইট! আপনি যদি খাদ্যরসিক হয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনার জন্যই। গরম গরম নানরুটি দিয়ে এই হালিম দুই/তিনজন ভরপেট খেতে পারবেন। এর জন্য  গুনতে হবে ৩৫০ টাকা মাত্র ।
 
এ বছর মার্চের শেষ থেকে যখন সবাই করোনায় ঘরবন্দী, তখন হঠাৎ মনে হলো খাবার যেহেতু বানাই কেন না কিছু রেসিপি শেয়ার করি।সেই থেকে একটি ফুডব্লগিং পেইজ (Sunny Side Up, https://www.facebook.com/NusratEats/) খুলে তাতে টুকটাক নিজের রেসিপি দেয়া শুরু করি।
দেশীয় রামেন নুডুল স্যুপ বা বিভিন্ন সালাদ এবং  অন্যান্য হালকা নাশতার রেসিপি। বিশেষত হাতের কাছে খুব সাধারণ উপাদান দিয়ে কিভাবে মুখরোচক কিছু বানানো যায় তাই ছিল মূল উদ্দেশ।খাবারের ছবি তোলার প্রতিও বিশেষ ঝোঁক থাকায় কাজটি আরো সহজ হয়ে গেলো।সব সহজলভ্য উপাদান আর কম সময়ে বানানো  যায় এইরকম খাবার নিয়েই লেখা শুরু করি।অনেকেই বলেছে যে তারা রেসিপিগুলো বাড়িতে বানিয়েছেন এবং স্বাদেও ছিল পরিপূর্ণ।
একজন রন্ধনশিল্পী হিসেবে এর চেয়ে আসলে বড় পাওয়া আর কিছু নেই।


নিজহাতে বানানো চিকেন কিমা বার্গার


স্ক্রাম্বেলড এগ ও চিজ সাথে টোস্ট করা পাউরুটি আর টমেটো


ইতালীয় ডেজার্ট তিরামিসু

অবসর পেলে লকডাউনকালীন সময়ে এভাবেই বিভিন্ন নতুন জিনিস বানিয়ে এবং ছবি তুলে স্ট্রেস রিলিফ করতাম।

আমরা প্রায়ই দেশীয় খাদ্য উপাদান কে উপেক্ষা করে যাই এবং ভাবি বিদেশী উপাদান হলেই তা দিয়ে নতুনত্ব আনা সম্ভব।

কিন্তু আপনি যতক্ষণ না হালকা ঘি এ রসুন, পেয়াজ কুঁচি দিয়ে তাতে তরতাজা বরবটি দিয়ে গোলমরিচ আর লবণ দিয়ে হালকা রান্না করে না খাচ্ছেন ততক্ষণ আপনি এই জাদুর দেখা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। এই যে দেখুন, কত্তো সহজেই না হয়ে গেলো একটি খাবার যা কিনা ভাত, রুটি সবকিছু দিয়েই খেতে ভালো লাগে।

স্বপ্ন দেখি, বাঙালি স্বতন্ত্র কিছু খাবারকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার। এখনো অনেক পথ পাড়ি দেয়া বাকি।

শীত এখনো সেভাবে আসেনি তবুও আমার সবজির বিলাসিতা শুরু হলো বলে।

[লেখকঃ ইউএনভি চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার, ইউনিসেফ বাংলাদেশ]

Comments (0)
Add Comment