দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর বাগেরহাটের মোংলায় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পণ্য ওঠানামা অনেক কমেছে। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কম আমদানির কারণে এমনটি হয়েছে।
সরকারি তথ্যে দেখা গেছে—গত জুলাই থেকে জানুয়ারিতে সমুদ্রবন্দরে প্রায় ১২ হাজার ৮৩ টিইইউ কনটেইনার ওঠানামা করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৩৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম।
গত জানুয়ারিতে পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে খারাপ। সে সময় কনটেইনার ওঠানামা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ কমে এক হাজার ৬৯৭ টিইইউ হয়। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কম আমদানির কারণে এমনটি হয়েছে।
স্থানীয় কার্গো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ফ্লিট ফ্রেইটের প্রধান নির্বাহী খায়রুল বাশার এ বিষয়ে বলেন, মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি সীমিত করেছেন। ফলে শিল্পের কাঁচামাল ও অন্য প্রধান আমদানি পণ্যের চালান কম হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ক্রমবর্ধমান খরচ ও চলমান আর্থিক সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান আমদানি কমিয়ে দিচ্ছে।
তার মতে, এটি দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক মন্দাকে তুলে ধরে। কারণ শিল্পের কাঁচামাল ও অন্য পণ্যের আমদানি কম হওয়ায় আমদানি-নির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বন্দরের তালিকাভুক্ত প্রায় ৭০০ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মধ্যে বর্তমানে ২৫০টি সক্রিয় আছে বলেও জানান তিনি।
বড় জাহাজ আকৃষ্ট ও প্রচুর পরিমাণে পণ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে এই বন্দরের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘উচ্চ আমদানি খরচ ও কম চাহিদার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) একেএম আনিসুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়াসহ দেশ-বিদেশে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পণ্য ওঠানামা কমেছে।
তিনি মনে করেন, এই মন্দা অস্থায়ী। আসন্ন অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বন্দরের পরিচালন ক্ষমতা বাড়াবে।
মোংলা বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সম্প্রতি অনুমোদিত এক প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, দক্ষতার সঙ্গে আরও বেশি বিদেশি জাহাজ আকৃষ্ট করতে নতুন জেটি তৈরি ও আইসিটির উন্নয়ন এই পরিকল্পনার মধ্যে আছে।
বিশেষ করে চার হাজার ৪৬ কোটি টাকার প্রকল্পে নতুন কন্টেইনার টার্মিনাল, কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড ও কনটেইনার স্টকইয়ার্ডসহ আরও আধুনিক সুবিধার মাধ্যমে বন্দরের কন্টেইনার ওঠানামার সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
গত জানুয়ারিতে কনটেইনার ওঠানামা কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামীতে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থিতিশীল হলে পরিস্থিতি বদলে যাবে। সমুদ্র বাণিজ্যে মোংলার অবস্থান সুদৃঢ় করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে মনোযোগ দিচ্ছে।’
সাম্প্রতিক মন্দা সত্ত্বেও তিনি আশাবাদী যে, সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নয়নসহ চলমান অবকাঠামো প্রকল্পগুলো আগামীতে মোংলা বন্দরকে গতিশীল করতে সহায়তা করবে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বাণিজ্য ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন সরকারি উদ্যোগের ওপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।