অমর একুশে গ্রন্থমেলা সাজছে গণঅভ্যুত্থানের আবহে

রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারের রক্তস্নাত ফেব্রুয়ারি… আর সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের মায়ের ভাষা… ভাষা শহীদদের স্মরণে… ৫২’র বীরত্বগাথায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

শ্রমিকের নিরলস পরিশ্রম আর কারিগরের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়া. বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুটোছুটি,তা সবই ২০২৫ এর এই বইমেলা আয়োজনকে ঘিরে।

এবারের বইমেলা ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে… শহীদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ ও ওয়াসিমসহ হাজারও প্রাণের বিনিময়ে এক শোষণ মুক্ত বাংলাদেশে প্রাণের মেলার আয়োজন। তাই তো এবারের প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।

এবারের বইমেলা সাজানো হচ্ছে ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের আবহে। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে চলছে স্টল তৈরির কাজ। বিগত বছরে যে সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হয়েছে এবার তারাও পেয়েছে স্টল বরাদ্দ।

মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৪৯টি আর স্টল ইউনিট ১১১। তবে দূর হয়নি প্যাভিলিয়ন বৈষম্য। বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি বলছে, বিগত স্বৈরাচার সরকার দলীয় লোকদের সুবিধা দিতেই প্যাভিলিয়ন সংস্কৃতি তৈরি করে। এদিকে বইমেলায় শৃঙ্খলা ফেরাতে চায় বাংলা একাডেমি।
কিন্তু যে আকাঙ্ক্ষায় হাজারো প্রাণের বলিদান আর অজস্র আহতের আর্তনাদ; অভ্যুত্থান পরবর্তী বইমেলায় তা কতটুকু পূর্ণ হল?

বিগত সময়ে যেসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির সব শর্ত পূরণ করার পরও বৈষম্যের শিকার হয়ে বঞ্চিত ছিল, এবার তারা বইমেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

বাংলা একাডেমির তথ্য বলছে, এবার মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৪৯টি আর স্টল ইউনিট ১১১টি। যেখানে মোট প্রতিষ্ঠান ৬৯১টি এবং মোট ইউনিট ১ হাজার ৫৭টি। বইমেলা যেন সবসময় সবার জন্য বৈষম্যমুক্ত ও উন্মুক্ত থাকে, সে চাওয়া পাবলিকেশন্সগুলোর।

গার্ডিয়ান্স পাবলিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘বছরের পর বছর কেবল ভিন্ন চিন্তার অজুহাতে কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে বার বার স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি। কিন্তু অনেক মানুষ স্টল বরাদ্দ পেয়েছে যাদের দলীয় লেজুড়বৃত্তি ও চিন্তাগত ঐক্য ছিল।’

সবাই অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেও দূর হয়নি প্যাভিলিয়ন বৈষম্য। এবারও ৩৫টি প্যাভিলিয়ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে মেলার মূল অংশে।

বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি বলছে, বিশ্বের কোনো বইমেলায় প্যাভিলিয়ন সংস্কৃতি না থাকলেও গত এক দশকে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের মদদ পুষ্ট সুবিধাভোগী প্রকাশকদের প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিতো বাংলা একাডেমি।

বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি সাঈদ বারী বলেন, ‘এক ইউনিট, দুই ইউনিট, তিন ইউনিট স্টলগুলো যেভাবে থাকছে, হঠাৎ করে তার মধ্যে বড় একটা প্যাভিলিয়ন। সাধারণভাবেই কিন্তু এটা দৃষ্টিকটু ব্যাপার।’

এদিকে কাগজ ও কালির দাম গতবারের মতই থাকায় মেলায় বইয়ের দাম বাড়ার সুযোগ নেই বলে জানান প্রকাশকরা।

অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন নাথ বলেন, ‘ওর মধ্যেই থাকবে। এক্সট্রা কোনো দাম যুক্ত হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই।’

প্রতিষ্ঠান এবং স্টলের দিক দিয়ে এ এযাবতকালের সবচেয়ে বড় বইমেলা হতে যাছে এবার বলে দাবি বাংলা একাডেমির। এ নিয়ে প্রস্তুতির এ নিয়ে প্রস্তুতি কেমন তাদের? বৈষম্য কতটা দূর করতে পারছে তারা?

অমর একুশে বইমেলা ২০২৫ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন বলেন, ‘এগুলো বিবেচনায় ছিল। সেই সঙ্গে কিছু অভিযোগও ছিল। আমাদের বইমেলা পরিচালনা কমিটি সব অভিযোগ নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করেছেন।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘যতজন আবেদন করেছে ততজনকে পারি নি। তবে কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক প্রকাশককে আমরা বইমেলায় নেয়ার চেষ্টা করেছি।’

Comments (0)
Add Comment