৭০ বছর রাজত্ব করার পর ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী রাজশাসক রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্যালমোরাল প্রাসাদে প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর প্রথা অনুযায়ী ইংল্যান্ডের রাজা হয়েছেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তৃতীয় চার্লস।
চলতি বছরের শুরুতেই রানি এলিজাবেথ ঘোষণা করেছিলেন, তার অবর্তমানে ‘কুইন কনসর্ট’ হবেন চার্লসের স্ত্রী, ডাচেস অব কর্নওয়াল ক্যামিলা। তবে একজন সাধারণ নারী থেকে ‘কুইন কনসর্ট’ হতে ক্যামিলাকে পাড়ি দিতে হয়েছে বন্ধুর পথ। বিশেষ করে প্রচণ্ড জনপ্রিয় প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে চার্লসের ডিভোর্সের পর নিজেকে চার্লসের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ক্যামেলিয়াকে ডিঙাতে হয়েছে বিতর্কের পাহাড়।
বছরের পর বছর ধরে, ক্যামিলা নিন্দিত হয়েছেন চার্লস-ডায়ানার রূপকথার রাজকীয় প্রেমের গল্পকে ভেঙে দেওয়ার জন্য। প্রিন্সেস ডায়ানাও ১৯৯৫ সালে বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছিলেন যে ‘এই বিয়েতে আমরা তিনজন ছিলাম’–তিনি, চার্লস এবং তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ক্যামিলা।
এমনকি ডায়ানা তার প্রেমের প্রতিদ্বন্দ্বীকে ‘রটওয়েলার’ (বিশেষ জাতের কুকুর) বলেও অভিহিত করেছেন বলে কথিত আছে।
ব্রিটেনের অভিজাত পরিবারে ১৯৪৭ সালের ১৭ জুন ক্যামিলার জন্ম ।
আত্মবিশ্বাসী এবং আকর্ষণীয় ক্যামিলার সঙ্গে ১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে একটি পোলো ম্যাচে তরুণী ক্যামিলার সঙ্গে প্রিন্স চার্লসের প্রথম দেখা হয়। পরে তারা ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। তবে চার্লসের সঙ্গে প্রথমবার সাক্ষাতের তিন বছর পর ১৯৭৩ সালে ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তার অ্যান্ড্রু পার্কার বোলসের সঙ্গে বিয়ে হয় ক্যামিলার। তাদের বিয়েতে রাজকীয় অতিথিদের মধ্যে রানির বোন, রাজকুমারী মার্গারেট এবং রাজকুমারী অ্যানও উপস্থিত ছিলেন।
বোলস-ক্যামিলার দুই সন্তানও আছে। যদিও ক্যামিলা-চার্লসের পরস্পরের প্রতি টান রয়েই যায়। এমনকি ১৯৮১ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে রাজকীয় বিয়ের পরও ক্যামিলাকে ভুলতে পারেননি চার্লস।
গোপনে ক্যামিলা ও চার্লসের প্রণয় নিয়ে সেসময় অনেক কানাঘুষাও হয়। ১৯৯৫ সালে অ্যান্ড্রু পার্কার বোলস ও ক্যামিলার বিচ্ছেদ হয়। এর মাত্র এক বছর পর প্রিন্সেস ডায়ানা ও চার্লস তাদের সম্পর্কের ইতি টানেন।
১৯৯৭ সালে প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় ডায়ানা মৃত্যুর পরও চার্লস ও ক্যামিলা তাদের সম্পর্ককে চেপেই রেখেছিলেন। এরপর চার্লস এবং ক্যামিলা ধীরে ধীরে জনসমক্ষে একসঙ্গে উপস্থিত হতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসে যে তারা স্বামী ও স্ত্রী হিসাবে একসাথে বসবাস করছে।
কয়েক মাস সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করার পর, ১৯৯৯ সালে তারা প্রথম জনসাধারণের সামনে আসেন। তারপরে তাদের সম্পর্ক নিয়ে আর কোনো রাখঢাকই থাকে না।
এক সময় তাদের জুটিকে হিসেবে সবাই মেনেও নেয়। ২০০৫ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের বিয়েতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও উপস্থিত ছিলেন।
অবশ্য চার্লসের সঙ্গে বিয়ের পরও রয়ে যায় ক্যামিলার উপাধি নিয়ে বিতর্ক। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে রাজার স্ত্রী হলেন রানি। কিন্তু চার্লস রাজা হলে ক্যামিলার উপাধি কী হবে তা বছরের পর বছর ধরে একটি বড় প্রশ্ন ছিল। রাজতন্ত্রে তার অবস্থান সবসময়ই একটি সংবেদনশীল বিষয় ছিল। প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর চার্লসের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে রাজতন্ত্রে ক্যামিলার অবস্থান সব সময়ই একটি সংবেদনশীল বিষয় ছিল।
প্রাসাদের কর্মকর্তারা বছরের পর বছর ধরে বলেছিলেন যে, চার্লস রাজা হলে ক্যামিলাকে সম্ভবত ঐতিহ্যবাহী ‘রানি কনসর্ট’ এর পরিবর্তে ‘রাজকুমারী কনসর্ট’ উপাধি দেওয়া হবে।
রাজ প্রাসাদের কর্মকর্তাদের মতে, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাসে ‘প্রিন্সেস কনসর্ট’ উপাধির কোনো উদাহরণ নেই। একই ধরনের উপাধি ‘প্রিন্স কনসর্ট’ শুধুমাত্র একবার রানি ভিক্টোরিয়ার স্বামী অ্যালবার্টের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে, তার ছেলে প্রিন্স চার্লস রাজা হলে ক্যামিলাকে ‘কুইন কনসর্ট’ উপাধি দেওয়া হবে। এরপরই এই নিয়ে বিতর্কের অবসান হয়। এমনকি চার্লসের রাজা হিসেবে অভিষেকের সময় ক্যামিলার মাথায় উঠবে কোহিনুর বসানো মুকুট। সূত্র: এএফপি