গণহত্যায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত সরকার অপরাধ করছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা। তিনি বলেছেন, পার্শ্ববর্তী একটি রাষ্ট্রে এক অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া একটা বিরাট অপরাধ। মোদি সরকারকে এটা উপলব্ধি করতে হবে, তাদের এই আইন জানতে হবে। আজ না হোক একদিন এর জবাবদিহি করতে হবে।
বুধবার(১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি।
ভারতের অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে আশরাফুল হুদা বলেন, যিনি বসে বসে সেখানে (ভারতে), ষড়যন্ত্র করছেন। তাকে এক না একদিন বিচারের আওতায় আনা হবে, ইনশাআল্লাহ।
বিএনপি সরকারের আমলে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণকে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা এখানে গুটিকয়েক পুলিশ অফিসার নেমেছি, আরও হাজার হাজার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার রয়েছে। প্রয়োজনে আমরা সবাই নামব। এদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় পুলিশ যেমন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবে, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারাও তেমনিভাবে স্বাধীনতা রক্ষা করে যাবে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা রক্ত চক্ষু দেখাচ্ছেন তাদের চক্ষু উপড়ানোর জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, সাবধান হয়ে যান।
সাবেক এই আইজিপি ভারতের খবরদারির প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ’৭৫ এর পর এত সরকার এল গেল, কই কখনো তো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এত অস্থিরতা দেখিনি। এখন এমন কী হয়েছে যে বিগত সরকার পরিবর্তন হওয়ায় ভারত উম্মাদ হয়ে গেছে।
সাবেক উপপুলিশ মহাপরির্দশক (ডিআইজি) ও মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ভারতের দালালির জন্য যুদ্ধ করি নাই। তাদের নতজানু হওয়ার জন্য যুদ্ধ করি নাই। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম স্বাধীন স্বত্তা হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য। প্রয়োজনে আবারো প্রস্তুত আছি যুদ্ধ করার জন্য।
সমাবেশে বক্তব্য দেন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত বিভিন্ন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, আমরা কারো আগ্রাসন মেনে নেব এজন্য একাত্তরে যুদ্ধ করিনি। আমরা আগেও এক ছিলাম, এখনো এক আছি, এক থাকব। আমরা এক থেকে এদেশের বিরুদ্ধে সব অপ্রচার রুখে দেব।
তারা আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, আমরা এরূপ আচরণ বরদাস্ত করব না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকারের ঐক্য প্রক্রিয়াকে আমরা পূর্ণ সমর্থন করে এর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে আমরা এমন এক বাহিনীর উত্তরসূরি যারা রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে সর্বপ্রথম পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আবারো প্রয়োজন হলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।
এর আগে সকাল ১১টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে একটি মিছিল নিয়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা জাতীয় প্রেসক্লাবে আসেন। সেখানে তারা এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আকবর আলী। সমাবেশ শেষে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিভিন্ন বিষয়ে দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মাহফুজুল হক, সাবেক ডিআইজি বখতিয়ার আলম, সাবেক এসপি আব্দুর রহমান খান প্রমুখ। সমাবেশে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক শতাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।