ভারত থেকে শূন্য হাতে নয়, বরং বাংলাদেশ অনেক কিছু পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই সফরের মাধ্যমে দু’দেশের একসাথে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এসময় ভারত সফরে দু’দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকসহ বিস্তারিত জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত সফরে সহযোগিতার যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে তা এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবও দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
কুশিয়ারা নদীর পানি পাওয়ার বিষয়ে ও সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কবে নাগাদ পানি পাওয়া যাবে- এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যে চুক্তিগুলো করেছিলেন, সেগুলো যদি একে একে বাস্তবায়িত হতো; তাহলে আমাদের দেশের জন্য অনেক কল্যাণ বয়ে আনতো। সেগুলো অনেকগুলোই আমরা ইতোমধ্যে কার্যকর করেছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়েছে সমস্ত জলাভূমিগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার এবং জলাধার সংরক্ষণ করা। সেচের খালগুলো বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেগুলো আবার নতুন করে মেরামত করা হয়েছে। কতগুলো খাল আবার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন পানি নষ্ট না হয়। ইতোমধ্যে যৌথ নদী কমিশনের মিটিং হয়ে গেছে। কুশিয়ারার যেহেতু পানিটা পাব, আমরা এটা দ্রুত করবো।
ভারতের সফরে দেশটির আন্তরিকতা কেমন ছিল জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের আন্তরিকতা সবসময়ই ছিল। বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দলমত এক থাকে। একাত্তরে যেমন এক হয়ে সমর্থন দিয়েছিল। আবার ছিটমহল যখন বিনিময় করি ভারতের সংসদে যখন এটা পাস হয় তখন দেশটির সব দল কিন্তু সমর্থন দিয়েছিল।
‘একটা দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি সেসব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অন্তত পরিষ্কার- কারও সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব। ’৯৬ সালের পর আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা নিয়ে কেউ কথা-ই বলেনি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। তবে এতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও ফাটল ধরেনি।’
ভারতের কাছ থেকে আমরা কী পেলাম- জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নির্ভর করে বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন। বাংলাদেশের ভৌগলিক যে অবস্থান সেখানে চারিদিকে কিন্তু ভারত। একপাশে অল্প একটুখানি মিয়ানমার। সেই বন্ধুপ্রতীম দেশ থেকে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমাদের কৃষি যোগাযোগ। আমাদের সব বিষয়ে যে সহযোগিতাটা..এমনকি আমাদের তেল..আমরা পাইপ লাইনের মাধ্যমে কিন্তু তেল নিয়ে আসছি। পাইপ লাইন কিন্তু ভারত তৈরি করে দিচ্ছে। পার্বতীপুর আমাদের যে ডিপো, সেই ডিপোতে কিন্তু থাকবে। সেই চট্টগ্রাম থেকে বাঘাবাড়ি..এতদূর আর যেতে হবে না। রিফাইন করা তেল ওখানেই পাবে। উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আরও বৃদ্ধি পাবে। মানুষের আর্থিক অবস্থা উন্নত হবে। এভাবে যদি আপনি একটা একটা চিন্তা করেন..অনেক পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা দেখা দেয়। সেগুলো যাতে আমরা ঠিকমত পাই। এলএনজি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত যে এলএনজি নিয়ে আসছে সেখান থেকে যাতে আমরা পাই। খুলনার ওই অংশটা যাতে আমরা আনতে পারি। ওই দিকে যাতে গ্যাসের সমস্যা.. এরকমভাবে যদি চিন্তা করেন, অনেক কিছু পেয়েছে। শূন্য হাতে ফিরে আসিনি। যেমন বাংলাদেশের এত কাজ করার পরও বিএনপি বলে কিছুই করিনি। তাহলে এখানে আমার তো কিছু বলার থাকে না। এটা হচ্ছে মানুষের আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার।
‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকের এডিটিং চলছে
বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক কবে মুক্তি পাবে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝে করোনার কারণে শুটিং বন্ধ ছিল। এই সিনেমার সব শুটিং ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে সেটা হয়নি। তারপর বম্বেতে বেশিরভাগ শুটিং হয়েছে। কিছু অংশ আমাদের ঢাকায়ও হয়ে গেছে। এখন এডিটিং চলছে। ট্রেইলার দেখার পর কিছু প্রশ্ন এসেছে। ট্রেইলারটা যদি গ্রহণযোগ্য না হতো, তাহলে ফ্রান্সের কান ফেস্টিভালে এটা কোনোদিনই কিন্তু গ্রহণ করতো না। এখানে আমাদের অনেকে অনেক কথা বলতে পারে, তবে এটা বিবেচনা করতে হবে; কান চলচ্চিত্র কিন্তু যা-তা গ্রহণ করে না। এমনকি সেটা তারা সেখানে দেখাতে দেয় না। আসলে ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতাকে ওভাবে দেখার পর সেটাকে অভিনয় করে দেখালে এটা নিতে একটু অনেকের কষ্ট হয়। আসলে এটা যখন সিনেমা হবে তখন কেউ না কেউ তো অভিনয় করতে হবে। আর সেভাবে করার চেষ্টা করতে হবে। তবে যেটুকু করেছে চমৎকার করেছে। কারণ আমি যতটুকু দেখেছি, ট্রেইলারে কানে যাওয়ার আগে আমাকে পাঠানো হয়েছে আমি দেখেছি। দেখার পর যেখানে যেখানে সংশোধন ছিল তা করে দেওয়ার পরই সেটা নিয়েছে। এখন আমাদের ভেতরে যিনি আছেন, তাকে তো আমরা ফিরিয়ে আনতে পারবো না। বা ওটা ওভাবে নিয়ে আসাও ঠিক না। একটা সিনেমা যখন সেটাকে সিনেমা হিসেবেই দেখতে হবে। বায়োপিকে যারা অভিনয় করেছে সবাই ভালো করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।