নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর এ সময়ে বিশ্ববাসী ভ্যাকসিন আবিষ্কারের খবরের আশায় তুমুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। দেশে দেশে চলছে গবেষণা। কে কার আগে ভ্যাকসিন তৈরিতে সফল হবে, তা নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। এক্ষেত্রে আশার বাণী শুনিয়েছে যুক্তরাজ্যের ঐতিহ্যবাহী অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। এরই মধ্যে অক্সফোর্ডের আবিষ্কার করা করোনা ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে ফলাফল এখনো মেলেনি। তার আগেই অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের এ ভ্যাকসিন বানরের শরীরে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরিতে সফল হয়েছে। এ সাফল্যের পর মানবদেহে ভ্যাকসিনের সম্ভাব্য কার্যকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা আরো আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। খবর মার্কেটওয়াচ ও বিবিসি।
গত এপ্রিলে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির খবর প্রথম জানিয়েছিল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। ওই সময় থেকে প্রাণীর শরীরে এর কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষাও শুরু হয়। এপ্রিলের শেষ দিকেই মানবদেহে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে শুরু করেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের ১৮-৫৫ বছর বয়সী ১ হাজার ১০২ জন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে পরীক্ষার জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এর ফলাফল এখনো মেলেনি। তার আগেই বানরের শরীরে ভ্যাকসিনটির সফলতার খবর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ছয়টি বানরের শরীরে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটির শরীরে ১৪ দিনের মধ্যে কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলেছে। আর সবগুলো বানরের শরীরে সর্বোচ্চ ২৮ দিনের মধ্যে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমতি নিয়ে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির ৭০টির বেশি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি গত ফেব্রুয়ারিতে ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নেয়। তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বানরের শরীরে করোনা প্রতিরোধী কার্যকর অ্যান্টিবডি তৈরিতে সফলতার খবর দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এ ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে এমন একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করবে যা সার্স ও করোনার মতো প্রাণঘাতী ভাইরাস সংক্রমণের সক্ষমতা হারাবে। এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আক্রান্ত রোগীকে জয়ী হতে সহায়তা করবে।
তবে ভ্যাকসিনটির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে বলেও এরই মধ্যে জানা গেছে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কিছুদিনের মধ্যে বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীরের অস্থি সংযোগে ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বানর, ইঁদুরের মতো প্রাণীর পাশাপাশি পর পর তিনটি ধাপে মানুষের শরীরে এ ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হবে। জুনের মাঝামাঝি এসব পরীক্ষার ফলাফল মিলতে পারে বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক জন বেল। প্রতিটি পরীক্ষা সফলভাবে উতরে গেলে এরপর ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।
সফল পরীক্ষা শেষে সেপ্টেম্বর নাগাদ ১০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনের আশা করছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। তবে কোনো সংখ্যা উল্লেখ না করে প্রকল্পের চিফ ইনভেস্টিগেটর অ্যান্ড্রু পোল্যান্ড বলেছেন, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন বড় পরিসরে উৎপাদনে যেতে পারে।