সুদানে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর নেই: প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী

সংঘাতপূর্ণ সুদান থেকে সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে ১৩৬ বাংলাদেশি ঢাকায় পৌঁছেছেন। দেশটিতে এখনো যারা আটকে আছেন, তাদের সবাইকে দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে ফেরত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আগামীকাল বা ১০ মে আরেকটি ফ্লাইট আসছে পারে।

সুদানে কোনো বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এখনো সুদানে কোনো বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর নেই।

বিমানবন্দরে আসার পর তাদের স্বাগত জানান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মন্ত্রী বলেন, ফেরত আনার বিষয়ে আইওএম সহায়তা করছে। তারা খালি হাতে ফিরেছেন। পুনর্বাসনে সহায়তা করার পাশাপাশি অন্যদেশে যেতে চাইলে সহায়তা করা হবে।

এ সময় সুদান থেকে ফিরে আসাদের কিছু আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়।

বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আরও যারা সুদানে আটকা পড়েছেন প্রয়োজনে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হবে।

এর আগে সোমবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ১৩৬ বাংলাদেশিকে বহন করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে রোববার দিবাগত রাত ১টায় বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে।

পোর্ট সুদান থেকে প্রথম দফায় ৭০ বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে সৌদি এয়ারফোর্সের বিশেষ ফ্লাইট রোববার দুপুরে জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এদের মধ্যে নারী, শিশু ও অসুস্থ যাত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় বিকালে সৌদি এয়ারফোর্সের আরেকটি বিশেষ ফ্লাইট ৬৬ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে জেদ্দায় পৌঁছায়।

গত ৩ মে সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে ৬৭৫ বাংলাদেশিকে নিরাপদে পোর্ট সুদানে নেওয়া হয়। দুই দফায় মোট ১৩টি বাসে করে তাদের সেখানে নেওয়া হয়।

সুদান থেকে বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাভেল পারমিট ইস্যু ও জাহাজের শিডিউল পেতে দেরি হওয়ায় পোর্ট সুদান থেকে বাংলাদেশিদের জেদ্দায় নিতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে বাকিদেরও দেশে ফেরানোর প্রচেষ্টা চলমান আছে।

রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, সুদানে প্রায় এক হাজার পাঁচশ বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন। এদের মধ্যে যারা দেশে আসার জন্য নিবন্ধন করেছেন পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট এ ব্যাপারে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ সুদানে গত ১৫ এপ্রিল থেকে দেশটির সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ এর বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। যাদের মধ্যে জাতিসংঘ কর্মী ও মিশরের সহকারী প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাও রয়েছেন। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুদানে প্রায় দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। এরমধ্যে রাজধানী খার্তুমেই প্রায় ১ হাজার ২০০ বাংলাদেশির বাস। যুদ্ধকালীন প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরমধ্যে আটকে পড়া ৬৭৫ জন বাংলাদেশিকে গত ৩ মে খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানে আনা হয়।

এদিকে চলমান যুদ্ধে সুদানে চিকিৎসাসেবা, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহতভাবে বিঘ্নিত হওয়া এবং খাদ্যের মজুত ফুরিয়ে আসায় মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদেশি রাষ্ট্রগুলো আরও আগেই তাদের নাগরিক ও কূটনীতিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে শীর্ষ দুই সামরিক নেতার কাউন্সিলের মাধ্যমে সুদানের রাষ্ট্র পরিচালনা হচ্ছে। তারা হলেন- সুদানের সেনাবাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং দেশটির উপ-নেতা ও আরএসএফ কমান্ডার জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো।

Comments (0)
Add Comment