যেসন কারণে তাপমাত্রা বেশি ঢাকায়

‘দারুণ অগ্নিবাণে রে হৃদয় তৃষায় হানে রে/ রজনী নিদ্রাহীন, দীর্ঘ দগ্ধ দিন…।’ কবিগুরুর এই দারুণ অগ্নিবাণে প্রকৃতি এখন বৈশাখের রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। এই মধ্য বৈশাখে রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। বৃষ্টির দেখা নেই। হাঁসফাঁস করছে জনজীবন-প্রাণিকুল। রসহীন শুকনো মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির তৃষ্ণা নিয়ে ছোটাছুটি করছে পাখ-পাখালি। অসহনীয় গরমে ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষ। জনজীবন অতিষ্ঠ।

শনিবার গত সাত বছরের রেকর্ড ভেঙেছে সারা দেশের তাপমাত্রা। ঐ দিন যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। একই দিন রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ ডিগ্রিতে। ঢাকায় ২৬ বছরের তাপমাত্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন গোটা দেশেই তাপমাত্রা বাড়তির দিকে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলছেন, প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে দেশ। রমজান মাসেও এই অবস্থায় নাভিশ্বাস মানুষের। বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ এলাকার ওপর দিয়ে তীব্র ও মাঝারি দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে গতকালও বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর ছিল। দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে ঢাকায় গরম একটু বেশি-ই অনুভূত হচ্ছে।

ঢাকায় বেশি গরম অনুভূত হওয়ার কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, সারা দেশেই তাপপ্রবাহ বয়ে গেলেও ঢাকায় তাপানুভূতিটা একটু বেশি। এর পেছনে ছয়টি কারণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- দিনের ব্যাপ্তিকাল রাতের তুলনায় বড় হওয়ায় রাতে তাপ বিকিরণ করে ধরণি ঠান্ডা করতে পারে না; সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কম; ঢাকায় অতিমাত্রায় এসির ব্যবহার; গাড়ির কার্বন বা কালো ধোঁয়া; ঢাকার আশপাশের ইটভাটার কার্বন এবং ঢাকাকেন্দ্রিক শিল্প-প্রতিষ্ঠানের নিঃসারিত দূষিত পদার্থ। সূর্য মানবসৃষ্ট কারণগুলোকে আরো প্রভাবিত করায় গরম তুলনামূলক বেশি অনুভূত হচ্ছে। আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঢাকায় বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকায় কিছুটা রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে। তা না হলে মানুষের অনেক ঘাম হতো। এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারত।

সম্প্রতি ‘সাসটেইনেবল সিটিজ অ্যান্ড সোসাইটি জার্নাল অব এলসেভিয়ের’-এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন ‘সার্ফেস আরবান হিট আইল্যান্ড ইন্টেনসিটি (এসইউএইচআইআই) ইন ফাইভ মেজর সিটিজ অব বাংলাদেশ :প্যাটার্ন্স, ড্রাইভার্স অ্যান্ড ট্রেন্ডস’- এ বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটেও একই সময়সীমার মধ্যে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বেড়েছে। মূলত জনসংখ্যার ঘনত্ব, গাছপালার অভাব, সুউচ্চ ভবন এবং মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে এই গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা ছাড়াও ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী রবিবারের পর বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে এবং দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এই অসহনীয় গরম কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে তিনি বলেন, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে শনি-রবিবার ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, সারা দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের আট বিভাগের তাপমাত্রা ৪০ কিংবা এর কাছাকাছি থাকবে। এরমধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হতে পারে ৪১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বরিশালে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ময়মনসিংহে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সিলেটে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চট্টগ্রামে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং খুলনায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Comments (0)
Add Comment