
ট্রাম্প মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে ‘মধ্যমণি’ মাস্ক, জানালেন হুমকির কথা
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার এক মাস পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম যে মন্ত্রিসভা বৈঠক করলেন, তাতে তার প্রিয়পাত্র ইলন মাস্ক কেবল উপস্থিতই ছিলেন না, হয়ে উঠেছিলেন মধ্যমণিও।
বুধবারের (২৬ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকে টেসলাপ্রধান গিয়েছিলেন ‘টেক সাপোর্ট’ লেখা এক কালো টি-শার্ট পরে, গেয়েছেন ফেডারেল কর্মীবহর ছোট করে আনতে তার প্রচেষ্টার গুণগান।
ট্রাম্প প্রশাসনে বিশ্বের এ শীর্ষ ধনীর প্রভাব কতটা, হোয়াইট হাউজে মন্ত্রিসভার বৈঠকটি যেন ছিল তারই নজিরবিহীন প্রদর্শনী, বলছে ইউএসএ টুডে।
বৈঠকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ধনকুবের ইলন মাস্ক বলেন, প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছি অনেক, সমালোচনারও মুখোমুখি হচ্ছি। চাইলে আমি এগুলো একসঙ্গে জড়ো করতে পারি। এসময় ব্যয় উল্লেখ করার মতো না কমালে ‘যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন ইলন। তবে এ বক্তব্যের পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ হাজির করেননি।
মার্কিন মহাকাশ প্রযুক্তি কোম্পানি স্পেসএক্স ও বৈদ্যুতিক গাড়িনির্মাতা টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্ক এখন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহচর। প্রেসিডেন্টের আদেশে তিনিই সরকারি ব্যয় ও অপচয় কমানোর উদ্দেশ্যে বানানো ডিওজিই’র কার্যক্রম দেখভাল করছেন।
ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর থেকে এ পর্যন্ত মাস্কের এই ডিওজিই ফেডারেল সরকারের অনেক দপ্তর বন্ধ করে দিয়েছে, অনেক দপ্তরের বাজেট কমিয়েছে, ছাঁটাই করেছে হাজার হাজার কর্মীকে।
মাস্ক সম্প্রতি ফেডারেল কর্মীদেরকে লেখা এক ইমেইলে তাদের সাম্প্রতিক অর্জনের তালিকা লিখে পাঠাতে বলেছেন; নির্দেশ না মানলে চাকরিচ্যুতিরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।
তার এই চিঠি প্রশাসনজুড়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি ও উদ্বেগেরও জন্ম দেয়; পরে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, মাস্কের চিঠির উত্তর দেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক।
এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই মাস্ক ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা বৈঠকে হাজির হন। বৈঠকটি পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিস্তৃত প্রশ্ন-উত্তর পর্বেও পরিণত হয়। সেখানে টেসলাপ্রধানকে দেখা গেছে প্রেসিডেন্ট ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা যে টেবিলে ছিলেন, তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে।
মাস্কের ভূমিকা নিয়ে মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের অসন্তোষ আছে কিনা, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের পর ট্রাম্প তার মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আছে কেউ ইলনের ওপর অসন্তুষ্ট? যদি থেকে থাকো, তাহলে এখানেই বলে ফেলো।
প্রেসিডেন্ট যখন এমনটা বলছিলেন, তখন মন্ত্রিসভার অনেককে হাসতে ও করতালি দিতে দেখা গেছে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, কেউ কেউ একটু দ্বিমত পোষণ করে, কিন্তু আমি আপনাদের বলবো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, আমার মনে হয় সবাই কেবল খুশিই নয়, তারা রোমাঞ্চিতও।
ট্রাম্প, তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন, জবাব দেন উপস্থিত সাংবাদিকদের নানান ধরনের প্রশ্নের।
সেখানেই যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রেসিডেন্ট জানান, খনিজ চুক্তি করতে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার হোয়াইট হাউজে আসছেন।
রাশিয়া ইউক্রেইনে হামলা চালানোর পর গত তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র কিইভকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিয়েছে, তার কিছুটা এই খনিজ চুক্তির মাধ্যমে ফেরত পেতে চাইছে ট্রাম্প।
মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট আরও জানান, তিনি শিগগিরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা গাড়ি ও অন্যান্য পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন।
তারা প্রকৃত অর্থেই আমাদের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছে। তারা আমাদের গাড়ি নিচ্ছে না, কৃষিপণ্য নিচ্ছে না। তারা নানান অজুহাত দিচ্ছে, তাহলে কেন তাদের ওপর শুল্ক দেওয়া হবে না?, বলেছেন তিনি।
মাস্ক বলেছেন, তার ডিওজিই ‘পুরোপুরি নির্ভুল নয়’ কিন্তু তিনি দ্রুত ভুল শুধরে নিচ্ছেন।
বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইউএসএআইডির ব্যাপারে ডিওজিই-র উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সের মালিক বলেন, দুর্ঘটনাবশত আমরা, খুবই অল্প সময়ের জন্য আমরা ইবোলা প্রতিরোধ কর্মসূচি বাতিল করে দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়, আমরা সবাই ইবোলা প্রতিরোধ চাই, তাই আমরা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওই কর্মসূচি ফের চালু করি।
মাস্ক জানান, শনিবার তিনি যে ইমেইল পাঠিয়েছিলেন, তাতে আগের সপ্তাহে সম্পন্ন করা ৫টি কাজ বুলেট-পয়েন্টে লিখে তাকে পাঠাতে বলা হয়েছিল। ২৩ লাখ ফেডারেল কর্মীর মধ্যে ১০ লাখের বেশি এরই মধ্যে ওই ইমেইলের জবাব দিয়েছে। এই ইমেইল দেখে অনেকে ভাবছিলেন বোধহয় কর্মদক্ষতা পর্যালোচনা করার জন্য এটি পাঠানো হয়েছে। আসলে এটি ছিল নাড়ি চলছে কিনা তার পর্যালোচনা। আপনাদের কি নাড়ি আর সামান্য বুদ্ধিমত্তা আছে?,” মাস্কের এই বক্তব্যে ট্রাম্প এবং অন্যদের মুখে হাসির রোল উঠে।
মাস্ক বলেন, তিনি ও তার ডিওজিই দলের ধারণা, ফেডারেল সরকারের বেতনভুক্তের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা মৃত।
ডিওজিইর প্রচেষ্টায় ‘আরও আগ্রসী’ হতে ট্রাম্প জনসমক্ষে যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তার প্রতিক্রিয়াতেই কর্মীদেরকে এই ইমেইল পাঠানো হয়েছে, বলেন টেসলার এ প্রধান নির্বাহী।
ট্রাম্প পরে বলেন, যে কর্মীরা মাস্কের ইমেইলের জবাব দেবে না, তারা বিপদে পড়তে পারে। আমি আরও যোগ করতে চাই, যে ১০ লাখ মানুষ এখনও সাড়া দেয়নি, ইলন, তারা ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমি এটা বলব না যে আমরা এটা নিয়ে রোমাঞ্চিত। তারা এখনও সাড়া দেয়নি। হতে পারে তাদের হয়তো অস্তিত্বই নেই। কারা এখনো সাড়া দেয়নি তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি আমরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো অনেক বিভাগের কিছু কর্মী তাদের কাজের গোপনীয়তার কারণে জবাব দেওয়া থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
তার প্রশাসন আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে ‘বৃহৎ পরিসরে কর্মী ছাঁটাই’ শুরুর প্রস্তুতি নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও ফেডারেল সংস্থাকে নির্দেশও দিয়েছে। কর্মীবহর কমাতে ট্রাম্প প্রশাসন যে এখন সামনে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে, এই নির্দেশেই তার ইঙ্গিত আছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (ইপিএ) প্রশাসক লি জেলডিনের সঙ্গে কথা হয়েছে, যিনি তার সংস্থার কর্মী বাহিনীর ৬৫ শতাংশই ছেঁটে ফেলার কথা বিবেচনা করছেন। আমরা এই প্রক্রিয়াটিও দ্রুততর করব। কাজ করেনি এমন অনেকে শুধু শুধু বাধা সৃষ্টি করছিল। এবং অনেকেই আছে, যাদের আদৌ অস্তিত্ব নেই বলেই আমার ধারণা।