বাংলাদেশ ও কসোভোর মধ্যে শিগগিরই সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি

শিগগিরই বাংলাদেশ এবং কসোভোর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তির আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও কসোভোর উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রেশনিক আহমেতি।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠকে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, চুক্তিটির খসড়া কসোভোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর এক মাস আগে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছি। চুক্তিটিতে সামান্য কিছু সংশোধন রয়েছে। এটি স্বাক্ষরের বিষয়ে আমরা পুরোপুরি একমত। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং ও মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হলে আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।

কসোভোর উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রেশনিক আহমেতি বলেন, সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তিটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলকে শিগগিরই কসোভোর রাজধানী প্রিস্টিনা সফরের আমন্ত্রণ জানাই। সেখানে দুই দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হতে পারে।

কে এম খালিদ বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ ও কসোভোর মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান। বাংলাদেশ যেমন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। একইভাবে কসোভোও দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ, বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া ২০৩০ সালে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বিভিন্ন যুগান্তকারী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর এবং সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বিশ্বের ৪৫টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে সর্বশেষ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় যেটিতে আমার উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর করার সৌভাগ্য হয়েছিল।

কসোভোর উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ক্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। অন্যদিকে সার্বিয়ান আগ্রাসনের কারণে কসোভোর লোকজনও উপযুক্ত শিক্ষাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলো। সে বিবেচনায় দু’দেশই একই ধরনের ইতিহাসের অংশীদার।

তিনি বলেন, দুই দেশের সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ একই ধরনের যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কসোভোকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি দেয়ার পর দেশটি বাংলাদেশে দূতাবাস চালু করে।তাছাড়া দু’দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীরা যাতে ভিসা ছাড়াই চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। কসোভোকে উৎসবের দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কসোভোতে প্রতিবছর বেশকিছু চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব উৎসবে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বিষয়টি সহজতর হবে বলে তিনি এসময় মত প্রকাশ করেন।

বৈঠকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর ‘বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ বিষয়ক একটি উপস্থাপনা পেশ করেন। তিনিও যথাশীঘ্র সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে রিপাবলিক অব কসোভো’র এশিয়া ও ওশেনিয়া বিভাগের প্রধান বারিশা লিরিজি, বাংলাদেশে নিযুক্ত কসোভোর রাষ্ট্রদূত গানার উরেয়া, পলিটিক্যাল অ্যাডভাইজার ইমরি হোক্সা, রিপাবলিক অব কসোভো দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান ভিসার ক্লুনা এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমরুল চৌধুরী, যুগ্মসচিব সুব্রত ভৌমিক, উপসচিব মোহাম্মদ খালেদ হোসেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক অনির্বাণ নিয়োগী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ও কসোভোর মদহ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.