সুনীল অর্থনীতি: ‘মিনিস্ট্রি অব সি-রিসোর্সেস’ মন্ত্রণালয় স্থাপনের পরামর্শ

সমুদ্র সম্পদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘মিনিস্ট্রি অব সি-রিসোর্সেস’ নামে পৃথক একটি মন্ত্রণালয় স্থাপনে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) ইউজিসিতে ‘এক্সপ্লোরিং দ্যা পটেনশিয়াল অব সিউইডস ফর প্রমোটিং দ্যা ব্লু ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই পরামর্শ দেন।

‘ইউজিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেলোশিপ ২০২২’ এর আওতায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এ সেমিনারের আয়োজন করে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগর ঘিরে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে।

এর আর্থ-সামাজিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। দেশের সমুদ্র সম্পদের সমন্বয় সাধন, পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া বা সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি মন্ত্রণালয় স্থাপন করা প্রয়োজন।

দেশের প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, সমুদ্র গবেষকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ মন্ত্রণালয় গঠিত হতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ড. শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় সমান ভূখণ্ড পেয়েছি। দেশের সমুদ্রসীমায় কী পরিমাণ প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদ রয়েছে সেটি সুনির্দিষ্ট করা এবং একাজে গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, সমুদ্র সংরক্ষণ ও একে দূষণমুক্ত করতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সামুদ্রিক শৈবাল বিষয়ে তিনি বলেন, সিউইডস মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, পুষ্টির যোগানও দিবে। সিউইডস প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতকরণে উদ্যোক্তা তৈরি এবং একে জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে পরিচিত করতে এর পুষ্টিগুণ নিয়ে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি, সামুদ্রিক শৈবালের ঔষধি গুণ নিয়ে কাজ করার আহবান জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৫০০ এর মধ্যে না থাকা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। “দেশ পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সব সূচকে উন্নতি করছে। কিন্তু, লেখাপড়ায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছি। শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা দরকার। শিক্ষা ও গবেষণা হতে হবে ফল নির্ভর। পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, গবেষণা প্রকল্প নির্ধারণসহ শিক্ষায় শিল্প-একাডেমিয়া সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বিশেষ অতিথির ভাষণে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, বিশাল সমুদ্র অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। সিউইডসসহ সমুদ্র সম্পদের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা প্রকল্পের বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে যথাযথ অর্থায়ন করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকে গবেষণা পুল তৈরি করে গবেষণা প্রকল্প জমা দেওয়ার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সমুদ্র বিজয়’ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন; কিন্তু সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে না পারলে বিজয়ের অর্জন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারবে না। সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে তথ্য-উপাত্তের বড় অভাব রয়েছে বাংলাদেশে। আমাদের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্ভাবনী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যেমে নিজ নিজ বিষয়ের সম্ভাবনাকে সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে। সরকারকে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত সরবরাহের মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারে পরিকল্পনা গ্রহণে শিক্ষক ও গবেষকদের প্রতিশ্রুতবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে সী উইড পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশাল সমুদ্রের উপকূলে মানুষের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ। স্বল্প পুঁজিতে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ একদিকে যেমন আয়ের উৎস হবে, তেমনি তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সামুদ্রিক শৈবাল তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণ করতে পারে। অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখতে পারবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউজিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেলো এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট গবেষক প্রফেসর ড. মো. আফজাল হোসেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘ইউজিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেলোশিপ ২০২২’ প্রবর্তন করে এবং প্রফেসর ড. আফজাল হোসেনকে প্রথম ফেলো হিসেবে মনোনীত হন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.