মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্র ও গুরুত্ব

মুনিরা আজহার ঊর্মী

শনিবার (১০ অক্টোবর) ছিল- বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- ‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যঃ মানসিক স্বাস্থ্যে অধিক বিনিয়োগ- অধিকতর সেবার সুযোগ।’

এখানে বিনিয়োগ বলতে মানবিক ও অর্থনৈতিক উভয় বিষয়ের বিনিয়োগকেই বুঝানো হয়েছে। মানবিক বিষয়ের বিনিয়োগ বলতে বুঝানো হয়েছে, একজন মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবে গুরুত্ব দেয়া। একজন মানুষ যখন অপর মানুষকে সময় দিবে- একে অপরের পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিবে, মতামতকে সম্মান দিবে, সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনায় রাখবে এবং ভিন্নতা, স্বাতন্ত্র্যতা ও স্বাধীনতাকে গ্রহণ করবে তখনই বলা যায় যে মানুষ একে অপরকে সময় দিচ্ছে এবং মানবিক বিষয়গুলোকে আন্তঃপারস্পরিক সম্পর্কে চর্চা করছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে শিশুদের পছন্দ, অপছন্দ, মতামত ও সিদ্ধান্তকে বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। শিশুরা যেন পরিবার ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাসহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কথা বলতে পারে, নিজ স্বাধীন চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যেন শিশুর জন্য তার স্বতঃস্ফূর্ততার অন্তরায় হয়ে বোঝা স্বরূপ না হয়, শিক্ষা যেন শিশুর জন্য কেবলই মুখস্থবিদ্যা, নম্বর ও পরীক্ষাভিত্তিক না হয়, শিক্ষা যেন তার শৈশবকে কেড়ে না নেয় বা চুরি করে না পালায়— প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যেন হয় শিশুর জন্য জীবনমুখী এবং অভিজ্ঞতাভিত্তিক যা তার সামগ্রিক মনো-দৈহিক উন্নয়নকে জীবনব্যাপী ত্বরান্বিত করবে। অভিভাবক ও শিক্ষক হিসেবে সারাক্ষণই ‘পড়’ ‘পড়’ বলে এবং একগাদা বাড়ির কাজ দিয়ে তাকে কিছু শব্দ ও বাক্য মুখস্থ করিয়ে পরীক্ষায় প্রথম করানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না ঢুকে, শিশুর সুপ্ত ও প্রকাশিত গুণ, দক্ষতা এবং তার অপারগতা বা ব্যর্থতাকে নিয়েই শিশুকে গ্রহণ করার ইতিবাচক মানসিকতায় আমাদের সবাইকে উজ্জীবিত হতে হবে। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী প্রয়োজন।

কলকারখানা ও গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশকে ঝুঁকিহীন ও আরামদায়ক করে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য শিল্প মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ জরুরি।

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জীবনপ্রণালী ও তাদের পেশাগত মানসিক চাপকে বিবেচনায় রেখে তাদের জন্য মনোবৈজ্ঞানিক সহায়তার উদ্যোগ নেয়া দরকার।

এই করোনাকালীন সময়ে বিশেষ করে ডাক্তার, নার্স এবং বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক চাপকে বিবেচনায় রেখে তাদের জন্য বিশেষ মনোবৈজ্ঞানিক সহায়তা প্রদান জরুরি। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা করোনা হতে সুস্থতা লাভ করেছেন তাদের সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা জরুরি।

এছাড়াও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের ন্যায় এলাকাভিত্তিক ‘মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে মানবিক বিনিয়োগের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিনিয়োগ অত্যাবশ্যক। এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে এর ফলাফল হবে বহুমাত্রিক এবং সুদূরপ্রসারী।

এভাবে সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা গেলে নারী ও শিশুসহ সমাজের সকলের প্রতি সহিংসতামূলক আচরণ বন্ধ হবে এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেশে সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাবে।


লেখক-
সহকারী অধ্যাপক
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.