মল্লিকার্জুন খাড়গে কংগ্রেসের ভাগ্য ফেরাতে পারবেন?

ভারতীয় কংগ্রেসের নতুন সভাপতি হয়েছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। এর মাধ্যমে দুই যুগ পর গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ কংগ্রেসের সভাপতি হলেন। গত সোমবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার ভোট গণনায় দেখা যায়, গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ মল্লিকার্জুন খাড়গে পেয়েছেন ৭ হাজার ৮৯৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুর পেয়েছেন ১ হাজার ৭২টি ভোট। শশী থারুর তাত্ক্ষণিক পরাজয় মেনে নিয়ে বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আজ থেকে দলের পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া শুরু হলো। শুধু শশী থারুর নয়, কংগ্রেসের সব নেতা-কর্মী ও সমর্থকও এটাই মনে করেন!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলতেন, গান্ধী পরিবারের সদস্যরা হলেন ‘নামদার’। আর সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা তিনি হলেন ‘কামদার’। কর্ণাটকের বিদারের গরিব দলিত পরিবারের সন্তান, সাধারণ কারখানার কর্মীর পুত্র, শ্রমিক রাজনীতি করে উঠে আসা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে সভাপতির আসনে বসিয়ে এবার কংগ্রেস নেতৃত্ব আশা করছে, বিজেপির পরিবারতন্ত্র ও গান্ধী পরিবারকে আক্রমণ কিছুটা হলেও কমবে। নতুন সভাপতি খাড়গে দায়িত্ব নেওয়ার পর বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছেন। রাজস্থানে অশোক গহলৌত বনাম সচিন পাইলট বিবাদ মেটানোর দায়িত্ব নিতে হবে তাকেই। গুজরাট-হিমাচল রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভালো ফল করতে হবে কংগ্রেসকে। তবে তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কংগ্রেসের হাল ফেরানো।

২০১৪ সালের পর থেকে কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে একটার পর একটা নির্বাচনে কংগ্রেস হেরেই চলেছে। বিভিন্ন রাজ্যে দলের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। পাঞ্জাবে কংগ্রেসকে প্রায় মুছে দিয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। এতদিন হিমাচল ও গুজরাটে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল কংগ্রেস। কিন্তু এবার দুই রাজ্যে আপ খুবই তোড়জোড় করে ভোটে লড়ছে। আপ নেতারা হিমাচল নিয়ে খুবই আশাবাদী। গুজরাটেও প্রায় প্রতি সপ্তাহেই গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। নরেন্দ্র মোদিও বেশ কিছুদিন আগে থেকে দুই রাজ্যে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেস সেভাবে প্রচারণা শুরু করেনি। এ অবস্থায় এই দুই রাজ্যের নির্বাচনে ভালো করা হবে খাড়গের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানে কংগ্রেসের ফল খারাপ হলে তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে।

যদিও কিছু বিশ্লেষক বলছেন, খাড়গেকে তো কংগ্রেসের হাল ফেরাবার জন্য সভাপতি করা হয়নি। নরেন্দ্র মোদি প্রায়ই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলে আক্রমণ করেন। সেই অভিযোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাকে সভাপতি করা হয়েছে। খাড়গে গান্ধী পরিবারের কথা শুনেই চলবেন। গান্ধী পরিবারই কংগ্রেস চালাবেন।

অন্যদিকে মল্লিকার্জুন খাড়গে কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ায় বিজেপি শিবিরও নতুন করে রণকৌশল সাজাতে শুরু করেছে। জগজীবন রামের পরে কংগ্রেসের সভাপতি পদে ফের কোনো দলিত নেতা। খাড়গে নিজে তার দলিত পরিচিতি কাজে লাগাতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এবার থেকে কংগ্রেস সভাপতিকে নিশানা করার সময় তার দলিত পরিচিতি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলে বিজেপি নেতারা মনে করছেন। তাদের দাবি, সভাপতি যে-ই হোন না কেন, দলের নিয়ন্ত্রণের রাশ থাকবে গান্ধী পরিবারের হাতেই। যা থেকে স্পষ্ট, খাড়গের বদলে রাহুল তথা গান্ধী পরিবারকেই নিশানা করার কৌশলে বিজেপি অনড় থাকবে। তবে খাড়গে যে বিজেপিকে টার্গেট করার নীতি গ্রহণ করবেন তা এখনই স্পষ্ট। সভাপতি নির্বাচিত হয়েই তিনি বলেন, দেশের সংবিধানের উপরে আঘাত ও গণতন্ত্র শেষ করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাই মিলে লড়তে হবে।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.