প্রাতিষ্ঠানিক ত্রাণের ব্যবস্থা প্রয়োজন

করোনাকালে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের দুর্ভোগ-দুর্গতির কথা নানাভাবেই গণমাধ্যমে উঠে আসছে। তবে জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকরা যে অভাবে পড়ে পেটের দায়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন, ইজিবাইক চালাচ্ছেন বা ফল বিক্রি করছেন- এগুলো মেনে নেওয়া আমাদের জন্য খুবই কঠিন ও কষ্টকর। গার্মেন্ট শ্রমিকদের কথা আলোচনায় আসে। বিভিন্ন খাতের মানুষের জন্য প্রণোদনার দাবি আসে। শিক্ষকদের কথা কেউ বলেন না।

অর্থ-বিত্ত না থাকলেও সামাজিক সম্মান শিক্ষকদের রয়েছে। লজ্জায় তারা নিজেদের সমস্যা আর সংকটের কথা কাউকে বলতেও পারেন না। কারও কাছে হাত পাততে পারেন না। তাদের কথা শোনার মতো কেউ নেই। তাই খিদের কষ্ট লুকিয়েও মর্যাদা নিয়ে থাকেন। সবার আগে এই মানুষগুলোর প্রাণ বাঁচাতে হবে। তাদের দিকে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

জরুরি এই মুহূর্তে সবার আগে এখন দরকার পরিবার পরিজনসহ এই মানুষগুলোর প্রাণ বাঁচানো। তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা দরকার। একটা কথা মনে রাখতে হবে, শিক্ষকরা আত্মমর্যাদার কারণে কোথাও গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে পারবেন না। তাই আমি মনে করি, তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ত্রাণ চালু করা যেতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, যেখানে যে প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ করছেন, সেখানেই তাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের বাড়িতে বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে পারে। শিক্ষকদের ব্যাপারে কার্পণ্য করলে চলবে না। শিক্ষকরা শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। তাদের অভুক্ত রেখে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা অলীক কল্পনা মাত্র।

জাতীয় বাজেট এলেই আমরা শিক্ষা খাতে জিডিপির কত শতাংশ অর্থ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করি। কোন দেশ জিডিপির কত শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করছে, আমরা কেন পারছি না, এসব আলোচনা চলে। আসলে জিডিপি দিয়ে শিক্ষকদের দুর্দশার কোনো ছবি আঁকা যাবে না।

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্দশার শিকার এই শিক্ষকদের সহায়তা দিতে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যত তহবিল আছে, যত সংস্থা, প্রতিষ্ঠান আছে- তাদের কাছ থেকেও সহায়তা নিতে হবে। তাদের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তা বণ্টন করতে হবে।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.