চাকরি পাচ্ছেন ‘ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়া’ আলমগীর

‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ এমন শিরোনামে মাস্টার্স পাস করা আলমগীর কবিরের একটি বিজ্ঞাপনের ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এটি ছড়িয়ে পড়তেই অনেকেই সে যুবকের সন্ধান চান।

বগুড়া শহরের জহুরুল নগর এলাকায় বসবাস করা যুবকের ভাইরাল এ বিজ্ঞাপন দেখে বুধবার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তাকে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে তার সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ সুপার। পরে পুলিশ সুপার তাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছেন আলমগীর। ২০২০ সালে মাস্টার্স পাসের পর থেকে চাকরি খুঁজছেন তিনি। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি তিনি পাননি।

এ জন্য পেশায় ‘বেকার’ উল্লেখ করে বগুড়া শহরের জহুরুল নগরের আশেপাশের এলাকায় প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের গণিত ছাড়া সব বিষয় পড়ানোর জন্য তিনি বিজ্ঞাপনটি দেন।

সাদা কাগজে কালো কালিতে প্রিন্ট করা বিজ্ঞাপনটি দেখা যায় শহরের বিভিন্ন দেয়ালে ও বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই। (সকাল ও দুপুর)। প্রথম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত, তবে গণিত বিষয় ছাড়া।’

আলমগীর কবির বলেন, মূলত খাবারের কষ্ট থেকেই বিজ্ঞাপন দিয়েছি। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।

পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আসার পর আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, এ মুহূর্তে আমার একটি টিউশনি আছে। সেখানে রাতে পড়াই। তারা আগে নাস্তা দিত। পরে আমি তাদের বলেছি নাস্তার বদলে ভাত খাওয়াতে। কিন্তু রাতে খাবারের সংস্থান হলেও সকাল আর দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা ছিল না।

আলমগীর কবির আরও বলেন, আমি টিউশনি করে পাই দেড় হাজার টাকা, সেটি দিয়ে হাত খরচ, খাবার, চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যাতায়াতসহ কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। সে জন্য আমি যেখানে থাকি তার আশেপাশে টিউশনি খুঁজছি, যেখানে আমার অন্তত দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যাবে; এ আশায় বিজ্ঞাপনটি দিয়েছিলাম।

বিজ্ঞাপনটি ভাইরাল হওয়ার পর কোনো সাড়া পেয়েছেন কি না, উত্তরে আলমগীর কবির বলেন, ওই বিজ্ঞাপনটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আমাকে অসংখ্য ফোন করে নানা ধরনের ভালো-মন্দ কথা বলা হয়েছে। সমবেদনাও জানিয়েছেন অনেকে। এক পর্যায়ে ফোনে একের পর এক কলের কারণে ফোন বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। চাকরিরও অফার দিয়েছেন অনেকে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করতাম। করোনার কারণে চাকরিতে সমস্যা হলে বগুড়ায় চলে আসি।

আলমগীর কবিরের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বুড়ইল গ্রামে। বহু কষ্টে বগুড়ায় এসে পড়াশোনা করেছেন। পাঁচ বছর আগে সরকারি আজিজুল হক কলেজে স্নাতকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। পরে স্নাতকোত্তরেও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন আলমগীর। পড়াশোনা শেষে হন্যে হয়ে একটি ভালো চাকরি খুঁজেছেন, কিন্তু পাননি।

বুধবার বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আলমগীরের মুখে তার জীবনের সব গল্প শোনেন। এর পর তিনি আলমগীর কবিরকে বলেন, আপনি সমস্যা হলে আমাদের কাছে আসতে পারতেন। আমরা আপনার জন্য চেষ্টা করতাম। আপনি সেটি না করে, কাউকে না জানিয়ে হুট করে এরকম একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের মর্যাদা নিজেই ক্ষুণ্ন করেছেন।

এর পর পুলিশ সুপার আলমগীরকে চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.