এক বেগুনী সভ্যতার গল্পঃ ফিনিশিয়া

রিফাত আহমেদ

মেসোপটেমিয়ার ব্যস্ত এক সমুদ্র বন্দর। বিশাল একটি জাহাজ এসে নোঙর ফেললো। এবার নানা রকম পণ্য নিয়ে এসেছেন তারা। নোঙর করা জাহাজটিতে ঢেউয়ের তালে তালে ছন্দ মিলিয়ে দুলছে সেসব পণ্য। মাইলের পর মাইল সমুদ্রপথে এতোদিন শুধু পানি আর পানিই দেখেছেন তারা। এবার মানুষের দেখা পেলেন সবাই। সত্যি, মন আজ আনন্দে আত্মহারা!

জাহাজের ডেকের ওপরে দাঁড়িয়ে আছেন তারা দশ-বারো জন। নাবিক, ব্যবসায়ী, সারেং -সবারই উন্নত নাসিকা; উজ্জ্বল তামাটে গায়ের রং। কারো কারো গায়ে ছোপ ছোপ লালচে রঙের আভা। কোঁকড়ানো চুল, আর মাথায় লম্বা টুপি। এই টুপি দেখেই বোঝা যায়, ফিনিশিয়া থেকে এসেছেন তারা।

সকালে সূর্যের মিষ্টি আলোয় মেসোপটেমিয়ার সেই তীরের বাড়ি-ঘরগুলো চিকচিক করছে। তীরের এদিক-ওদিক পাথর আর বালির স্তূপ। এসব স্তূপের সাথে রক্তলাল বর্ণের পাল উড়িয়ে আরো অনেক জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে। কেউ এসেছেন হরপ্পা থেকে, কেউ আবার মিশর থেকে। তীরভূমিতে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোকে টুপি পরিহিত ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দিলেন নিজেদের উপস্থিতি। পণ্য কেনাবেচায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সবাই।

সুদূর ফিনিশিয়া থেকে আসা এই সমুদ্রজীবী ব্যবসায়ীরা মেসোপটেমিয়ার রাজার জন্য নিয়ে এসেছেন নানা রকম বিলাসী পণ্য, পাথরের গয়না ও সোনার অলংকার। ভূমধ্যসাগর থেকে উত্তোলন করা হতো মিউরেক্স শামুক। আর তা থেকে নিঃসরিত রক্তবেগুনী রঞ্জক দিয়ে ডাই করা মূল্যবান কাপড় সে সময়ের অভিজাত ব্যক্তিবর্গ এবং সম্রাটদের বিশেষ ভালো লাগার পণ্য ছিলো।

বেশ কঠিন এই রং তৈরীর প্রক্রিয়া। কাপড় রাঙাতে গেলে হাত, পা ও শরীরের ত্বকে এমন বিশ্রীভাবে রং লেগে যায় যে, ধুলেও সহজে উঠানো যায় না। এ জন্যই মেসোপটেমিয়া ও গ্রীসের মানুষেরা তাদেরকে বেগুনী রঙের মানুষ বলেই সম্বোধন করে থাকেন। ‘ফিনিক্স’ নামটি গ্রীকদেরই দেয়া। সেই থেকেই ‘ফিনিশিয়া’ নামে পরিচিত তারা। তারা নিজেদেরকে কি নামে ডাকতেন, সেই ইতিহাস আজ হারিয়ে গিয়েছে।

বিশেষ এই বেগুনী রং তৈরীর কাজটি অত্যন্ত শ্রমসাধ্য হলেও এই রং থেকে মুনাফা তাদের এতো বেশি হতো যে, মুনাফা লাভের পর মনের সব কষ্ট দূর হয়ে যেতো। অতি পাকা এই রং। যতো বার ধোয়া হয়, ততোই যেনো আরো বেশি উজ্জ্বল হয়। মাত্র এক আউন্স রং তৈরী হয় প্রায় দশ হাজার শামুক থেকে। বয়ন শিল্পে বেগুনী রঞ্জকের এই ব্যবহার ফিনিশিয়ানদেরকে এক বাণিজ্যিক পরাশক্তিতে রূপান্তরিত করে তুলেছিলো।

অন্ধ কবি হোমারও তাদেরকে ‘ফিনিশিয়ান’ বলেই কবিতা রচনা করেছিলেন। হোমার তাদের কাঠশিল্পের দক্ষতা, পোশাক তৈরী, পুঁতি ও কাঁচের তৈরী পণ্যের ভূয়সী প্রশংসা করে কবিতা লেখেন। হিব্রু বইতেও তাদের রূপার গয়না ও লোহার দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে বেশ প্রশংসা রয়েছে।

স্বয়ং দেবতা তাদের শিক্ষাগুরু। নগর রাষ্ট্র তাইরের দেবতা মেলকার্ত, যিনি পরবর্তীতে গ্রীকদের কাছে হারকিউলিস নামে পরিচিত হন। প্রিয় বান্ধবীকে সাথে নিয়ে সমুদ্রতীর ধরে চলার সময় একদিন দুপুর বেলায় হারকিউলিসের কুকুর মিউরেক্স শামুক খেতে শুরু করে এবং তা থেকে নিঃসরিত তীব্র বেগুনী রঙের সৌন্দর্য দেবতার প্রেমিকার মনে রং ধরিয়ে দেয়। তিনি বায়না ধরে বসেন প্রিয়ের কাছে, ঐ রঙের একটি শাল বানিয়ে দিতে হবে। হারকিউলিস তার সেই আবদার পূরণ করবেন বলে কথা দেন এবং এভাবেই প্রথম বার সেই লালচে রক্তবেগুনী রঞ্জক তৈরী হয় বলে বিশ্বাস করেন ফিনিশিয়ান ও গ্রীকরা।

অতি প্রাচীনকাল থেকে কৃষিজমির অভাবই তাদেরকে ভূমধ্যসাগরকে কেন্দ্র করে বণিক হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেয়। জীবন ও জীবিকার জন্য সমুদ্রের সাথে তাদের গড়ে ওঠে গভীর বন্ধুত্ব। এই সভ্যতা বর্তমানের সিরিয়া, লেবানন ও উত্তর ইসরাইল নিয়ে অবস্থিত ছিলো। রাজনৈতিকভাবে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিকশিত হতে না পারলেও ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির মিলসম্পন্ন অনেকগুলো নগর রাষ্ট্রের সমন্বয়ে একটি কনফেডারেশন গড়ে তোলেন তারা। প্রতিটি রাজ্য সার্বভৌম ও স্বাধীন রাজা দিয়ে পরিচালিত হতো। নিজস্ব পৃথক সেনাবাহিনীও ছিলো তাদের।

একদিকে ছিলো অপার সমুদ্র, আর অন্য পাশে বিশাল পাহাড়। প্রকৃতিই এভাবে তাদের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো বলে অনেকদিন পর্যন্ত শত্রুর আক্রমণের তেমন সম্ভাবনা ছিলো না। তা ছাড়া প্রাচ্যের দেশগুলোতে তাদের পণ্যের বেশ কদর ছিলো। তাই প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে ভালোই ছাড় পেয়েছিলেন তারা। কাঁচ তৈরীতে সিডনের শিল্পীদের দক্ষতা এতোটাই অসাধারণ ছিলো যে, অনেক সময় ভুল করে তাদেরকে কাঁচ-আবিষ্কারক হিসেবেও আখ্যা দেয়া হতো। বলা হয়ে থাকে যে, তারাই মিশরবাসীকে ফিনিক্স বা বেগুনী রঞ্জক তৈরীর পথ দেখিয়েছিলেন।

লেবাননে ছিলো সিডার গাছের আধিক্য। এই গাছটিও তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে ভীষণ শক্তিশালী করে তুলেছিলো। এই গাছের কাঠে পোকা ধরে না এবং সহজে পচেও না। তাই কাঠের জাহাজ তৈরীতে তারা পরিণত হলেন মাস্টার প্লেয়ারে। মিশরের শুষ্ক অঞ্চলে গাছের অভাব পূরণ করতো এই সিডার গাছ, বিনিময়ে আসতো অফুরন্ত সোনা। ইতিহাসবিদ জর্জ রাউলিনসনের মতে, ইসরাইলের রাজা সোলায়মান ফিনিশিয়ান কারিগর ও কাঠ দিয়ে মহান হিব্রু মন্দির তৈরী করেছিলেন।

মিশরে আবার গরমের কারণে আঙুর এর ফলন ভালো হয় না। ফিনিশিয়ানদের প্রচেষ্টায় আঙ্গুর, জলপাই ও খেজুরের চাষ হয় বিস্তর এবং তা নিয়ে ব্যবসাও হয়েছিলো ভীষণ জমজমাট। তাই এই ফিনিশিয়ান নাবিকেরা মিশর হয়ে যাবার পথে ওয়াইন সরবরাহ করবেন মিশরের রাজার কাছে। আর এই ওয়াইনও চড়া দামে বিক্রি করে তারা প্রচুর স্বর্ণ সংগ্রহ করবেন মিশর থেকে।

ফিনিশীয়রা মিশর থেকে নিয়ে যেতেন লিনেন ও প্যাপিরাস; সাইপ্রাস থেকে নিতেন তামা; মেসোপটেমিয়া থেকে অ্যামব্রয়ডারী করা কাপড়; আরব থেকে সুগন্ধি, মশলা, হাতির দাঁত ও সোনা এবং আফ্রিকা থেকেও ভিন্ন ভিন্ন পণ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন কলোনিতে বিক্রি করতেন। বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সব ক্ষেত্রেই তারা সোনা কিংবা রূপা ব্যবহার করতেন। হিব্রু ও মিশরীয়দের সাথে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিলো সবচেয়ে ভালো।

মেসোপটেমিয়া ও মিশরে প্রতীকের ওপর ভিত্তি করে লিখিত ভাষার আবিষ্কার হলেও আজকের দিনে ব্যবহৃত বর্ণমালা এই ফিনিশিয়ানদের কাছ থেকেই পাওয়া উপহার। প্রথম দিকে চিত্রলিপি ব্যবহার করলেও ব্যবসার সুবিধার্থে আগের জটিল পদ্ধতি দূর করার জন্য তারা বর্ণমালার সূচনা করেন। বলা হয়, বর্তমানে প্রচলিত বেশিরভাগ পশ্চিমা ভাষার ভিত্তিই হচ্ছে এই ফিনিশিয়ান বর্ণমালা। অনেকে বলেন, মিশরীয় এবং আরবি বর্ণমালাও ফিনিশিয়ান বর্ণমালার ভিত্তিতেই তৈরী।

ফিনিশিয়ানদের এই ভাষা তাদের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি অঞ্চলে। ব্যবসায়িক লেনদেন তো তাদের বহু জাতির সাথে ছিলোই, হিসাবের রেকর্ডও রাখতে হতো সবার সাথে। এভাবেই ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তাদের বর্ণমালাও। গ্রীক ও রোমানরা এই বর্ণমালার জন্য ফিনিশিয়ানদের কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী। তবে এই বর্ণমালা নিজেদের করে নেয়ার সময় কিছুটা পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন তারা। তারা বর্ণমালায় দুটি বর্ণ যোগ করে নেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, হেরোডোটাস এই ফিনিশিয়ানদেরকেই এই বর্ণমালার জনক বলে আখ্যায়িত করেন।

জাহাজ তৈরীতে ফিনিশিয়ানরা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে জাহাজ তৈরীতে আনা হয় ব্যাপক ভ্যারিয়েশান। বাণিজ্যিক পণ্য বহন করার জন্য তারা তৈরী করেন গোল জাহাজ। আর সমুদ্রের জলদস্যুদের মোকাবেলায় সক্ষম যুদ্ধজাহাজগুলো তৈরী করা হয় লম্বা করে।

ঘোড়ার মাথা দিয়ে সজ্জিত ঐ শক্তিশালী জাহাজগুলো দাঁপিয়ে বেড়াতো সমুদ্রের বুকে। দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফলে তাদের জাহাজগুলো অল্প সময়ে বহু দূর যেতে পারতো বলে দেখা গিয়েছে যে, মিশর, গ্রীস, আফ্রিকা, স্পেন, এমনকি ইংল্যান্ডেও তাদের যাতায়াত হয়েছিলো বেশ সহজ। পরবর্তীতে তাদের জাহাজের নকশা অনুকরণ করেই গ্রীক, মিশরীয় ও রোমানরা জাহাজ তৈরী করেছিলেন এবং রাজত্ব করেছিলেন সমুদ্রের বুকে। সমুদ্রপথে তারাই প্রথম নর্থ স্টারের ব্যবহার শুরু করেছিলেন।

শক্তিশালী জাহাজ নির্মাতা অকুতোভয় এই জাতি ছিলো অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। নৌবাণিজ্য ছাড়াও ইতিহাসে তারাই প্রথম অর্থনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখতে সার্থক উপনিবেশবাদের সূচনা করেছিলেন। সমুদ্রের নায়ক তারা। সমুদ্রপথে চলতে চলতে সমুদ্রতীরবর্তী ব্যবসাবান্ধব অঞ্চলগুলোতে নিজেদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরী করেছিলেন তারা এবং লম্বা পথ পাড়ি দেবার সময় পানি, খাবার ও জাহাজের রসদ যোগান দেয়ার কাজগুলো হয়ে যেতো সে সব উপনিবেশ থেকেই। এভাবেই বিভিন্ন স্থানে তৈরী হয় সমুদ্র বন্দর এবং পাহারার জন্য রাখা হয় সৈন্য। সেই সাথে ব্যবসা তো চলতেই থাকে। এমনই এক শক্তিশালী বাণিজ্যিক অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হয় তিউনিশিয়ার কার্থেজ। ঐ সব বাণিজ্যিক বন্দরগুলোই কয়েকশো বছর পর একেকটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে বিকশিত হয়।

এতো সফলতার পেছনে আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। বিভিন্ন জাতের মানুষের সাথে মিশতে গিয়ে খুব ভালোভাবেই মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝে তাদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন ফিনিশিয়ানরা। মিষ্টিভাষী এই লোকেরা এভাবেই প্রতি ত্রিশ মাইলের মধ্যে নিজেদের একটি শক্তিশালী কলোনি গড়ে তুলে বাণিজ্যের সম্রাট হয়ে উঠেছিলেন।

পলিথিস্টিক ধর্ম ছিলো তাদের। অর্থাৎ বহু দেবতার পূজা করতেন তারা। পশু-পাখি এবং মানুষকে বলি দেয়ার প্রচলনও ছিলো তাদের মধ্যে। এমনকি নবজাতককেও বলি দিতেন তারা। তাদের কবরগুলো হতো লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে। তবে মিশরীয়দের মতো সমাধিসৌধ বানাবার কোনো প্রমাণ মেলে নি। মাটির নিচে প্রায় ছয় মিটার গভীর করে খুঁড়ে কফিনের মধ্যে মৃতদেহ রেখে কবর দেয়া হতো। মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে কোনো কৌতুহল তাদের ছিলো না। মৃত্যুপরবর্তী জীবনে তারা বিশ্বাসই করতেন না।

খরা এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্ব আস্তে আস্তে তাদেরকে পেছনে ফেলে দিচ্ছিলো। বহিঃশক্তির আক্রমণের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে কাজ করতে না পারার জন্য ক্রমশই তারা দুর্বল হয়ে যেতে থাকেন। গ্রীকরা শক্তিশালী হয়ে তাদেরকে ক্রমাগত কোণঠাসা করে ফেলছিলো। তাদের সম্মিলিত সামরিক শক্তি ঠিকভাবে বিকশিত হয় নি কখনোই। এ কারণে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছিলো ভীষণ দুর্বল। তাই পারস্যের অপ্রতিরোধ্য সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেটকে বাধা দিতে পুরোপুরি অক্ষম ছিলেন তারা। ফলে খুব সহজেই পার্সিয়ানরা তাদের রাজ্যটি জয় করে নিয়েছিলেন।

এরপরও করদ রাজ্য হিসেবে বেশ সুন্দর জীবনযাপনই করছিলেন তারা। বিভিন্ন যুদ্ধের সময় পারস্যকে শক্তিশালী নৌবহর দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করার সুবাদে পার্সিয়ানদের নেক নজরেই তারা ছিলেন। এভাবেই বেশ কিছু বছর অতিবাহিত হলো। হঠাৎ-ই দূর থেকে আবির্ভাব হলো এক ইগো-সম্বলিত রাজপুত্রের। সেই রাজপুত্র এসে ফিনিশিয়ানদেরকে শুধু পরাজিতই করলেন না, বরং তাদেরকে নিজেদের ভূমি থেকে বিতাড়িতও করে দিলেন। সেই তরুণ রাজপুত্র আর কেউ নন, স্বয়ং আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট।

আলেকজান্ডার তাইর দখল করে তাদেরকে মন্দিরে বলি দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাইরবাসী তাতে অসম্মতি জানান। বিদেশী বলে তাদেরকে শহরের বাইরে পূজো দেবার জন্য অনুরোধ করলেন তাইরবাসী। এই প্রস্তাব আলেকজান্ডারের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নি। তিনি তো ‘না’ শুনে অভ্যস্ত নন। অগ্নিশর্মা আলেকজান্ডার তাইরবাসীকে আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দিয়ে দূত পাঠান। সেই দূতকে তাইরবাসী হত্যা করে প্রাচীরের বাইরে ফেলে দিলে ক্ষুব্ধ আলেকজান্ডার তার সর্বাত্মক শক্তি দিয়ে রাজ্যটি আক্রমণ করে বসেন এবং প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষকে হত্যা করেন।

এই ঘটনার পর তাইরের বহু নাগরিককে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়। তবে অবস্থাপন্ন কিছু মানুষ নানা রকম উৎকোচ দিয়ে জীবন নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। বেশিরভাগ মানুষই কার্থেজে চলে গিয়েছিলেন। এরপর এক এক করে ফিনিশিয়ার অন্য রাষ্ট্রগুলোও আলেকজান্ডারের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এভাবেই ফিনিশীয় সভ্যতার অবসান ঘটে এবং হেলেনিস্টিক যুগের সূচনা হয়।

তাদের সব ইতিহাসই হারিয়ে গেছে। কিছু প্রত্নবরতু এবং তাদের শত্রুভাবাপন্নদের লেখাতেই তারা বেঁচে আছেন। তাদের সম্পর্কে জানবার এটাই ছিলো একমাত্র মাধ্যম। তবে ফিনিশীয় সভ্যতার ইতিহাসকে এতো তুচ্ছ করে দেখা উচিৎ হবে না। কারণ যখন এই বেগুনী রঙের বণিকেরা সমুদ্রবাণিজ্যে রাজত্ব করে বেড়িয়েছেন, তখন গ্রীস কিংবা রোমের তেমন রমরমা অবস্থা ছিলো না। কার্থেজ যখন রমরমা, রোম তখন ছোট্টো শহরমাত্র। দুর্যোগপূর্ণ সমুদ্রকে এই ফিনিশিয়ানরা জয় করেছেন এবং দীর্ঘ সময় নিজেদের প্রভাব রেখে গেছেন নৌবাণিজ্যে। বিশাল এক সময় তারা সমুদ্র বাণিজ্যে প্রাধান্য বিস্তার করেছেন। এমন এক এক্সট্রা-অর্ডিনারী অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় জাতির অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করা তো আমাদেরই দায়িত্ব।

রেফারেন্সঃ https://roar.media/bangla/main/history/purple-pheonicia-the-birthplace-of-alphabets

[লেখকঃ চেয়ারপার্সন, সিদ্দিকি’স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’স এসিস্ট্যান্স ফাউন্ডেশন। ইতিহাস, বিজ্ঞান নিয়ে লেখা staycurioussis.com (বাংলা এবং ইংলিশ) ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা]

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.