ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ‘বিক্রি হতে’ চান সাতক্ষীরার তরুণ

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য নিজেকে ‘বিক্রি করতে’ চান সাতক্ষীরার তরুণ গাজী আনিস। এজন্য মূল্য ধরেছেন ৩০ লাখ টাকা।

শুক্রবার (২৮ মে) জাতীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ‘বিক্রি হব (ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য)’ শীর্ষক প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে নিজেকে বিক্রির প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি।

প্ল্যাকার্ডে গাজী আনিস তার মূল্য ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণের পাশাপাশি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় কিছু মোবাইল ভিত্তিক লেনদেনের নম্বর দিয়েছেন। হ্যাশট্যাগ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গাজী আনিস লেখেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংগ্রাম করে উপকূলবাসীর টিকে থাকার সংগ্রাম বহুদিনের। আইলা, সিডর, বুলবুল, আম্ফান, ইয়াসের মতো একের পর এক দুর্যোগ এসব এলাকায় আঘাত হেনেছে। কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় দিন দিন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। ইয়াসের প্রভাবেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলের মানুষ। স্বপ্নহারা হয়েছে অনেক শিশু, অনেক পরিবারের শেষ সম্বল ভেসে গেছে পানিতে। এখনো অনেকেই বাড়িছাড়া হয়ে বসবাস করছেন। দিনে দিনে এই দুঃখ বাড়ছে। আমার জন্মভূমি উপকূলীয় এলাকায়। যেখানের আলো বাতাসে বেড়ে উঠেছি, সেসব মানুষের কথা চিন্তা করে সহযোগিতা করার জন্য নিজেকে বিক্রি করার এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমার মতো তরুণরা যদি এমন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেন, নিশ্চয়ই একটা সমাধানের পথ বের হবে।’

এ বিষয়ে গাজী আনিস বলেন, ‘ইয়াস মূলত আঘাত হেনেছে ভারতে। সেখানে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ইয়াসের প্রভাবেই বাংলাদেশে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর কারণ হলো টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকা। যারা মারা গেছে বা যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার প্রায় সবই হয়েছে উচ্চ জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে সৃষ্ট বন্যায়। এ কারণে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো টেকসই বেড়িবাঁধ। আমি নিজেকে বিক্রি করেও যদি টাকা পাই, তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করতে চাই।’

রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগে স্নাতক সম্পন্ন করা গাজী আনিসের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায়। শৈশব থেকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত তিনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বেশ কয়েক বছর আগে থেকে উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার দাবি জানিয়ে আসছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৬ মে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে বয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা। পৃথক স্থানে পানিতে ডুবে প্রাণ গেছে পাঁচ শিশুর। এছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ। ঝড়ো হাওয়ায় বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। ডুবে গেছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি। ভেসে গেছে কয়েকশ পুকুরের মাছ।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.