অগ্রণী ব্যাংক ডিসেম্বরের মধ্যে ২,০০০ কোটি টাকা মুনাফা করবে

অগ্রণী ব্যাংক সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বর্তমানে রেমিট্যান্স আহরণে ১ নম্বর, আমদানিতে ১ নম্বর, অফশোর ব্যাংকিংয়ে ১ নম্বর, রপ্তানিতে শীর্ষে, গ্রিন অর্থায়নে শীর্ষে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে অর্থায়নে শীর্ষে রয়েছে। সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়ে ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেছেন, অগ্রণী ব্যাংক চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা মুনাফা করবে।

শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪৫ বছরে অগ্রণী ব্যাংকের আমানত বেড়েছিল ৪৯ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরে আমানত বেড়েছে ৫১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা।
৪৫ বছরের তুলনায় পাঁচ বছরে আমানত বেশি সংগ্রহ হয়েছে দুই হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের মে মাসে দেশের তৃতীয় ব্যাংক হিসেবে লাখ কোটি টাকার আমানতের মাইলফলক অতিক্রম করে অগ্রণী ব্যাংক। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত এক লাখ ৯৫৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারির কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আমরা আমানত দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে পেরেছি। ’

ব্যাংক সূত্র জানায়, মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট ব্যাংকটির দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ঘোষণা দেন, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০০ কোটি টাকা মুনাফা করবেন। এই লক্ষ্য পূরণে দায়িত্ব নিয়ে ১০০ দিনের কর্মসূচি দেন তিনি। একজন অভিজ্ঞ ব্যাংকার হিসেবে তাঁর দক্ষতায় নানা সংকটে থাকা ব্যাংকটি তখন মাত্র ছয় মাসের কম সময়ে ৫৫৫ কোটি টাকা মুনাফা করে।

শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘শুধু আমানত বৃদ্ধি করে ব্যাংকের ভিত মজবুত করা নয়, বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছি। ৪৫ বছরে ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রিম বেড়েছে ২৬ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। অথচ ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরে ঋণ ও অগ্রিম বেড়েছিল ৩৩ হাজার ২০৩ কোটি টাকা, যা দেশের জিডিপির ১.১২ শতাংশ। ৪৫ বছরের তুলনায় পাঁচ বছরে বিতরণ বেশি হয়েছে ছয় হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। ’

তিনি জানান, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ৫৯ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে ব্যাংকের মোট সম্পদও বেড়েছে বিপুল পরিমাণে। ৪৫ বছরে যেখানে সম্পদ বেড়েছে ৬২ হাজার ২২০ কোটি টাকা, সেখানে মাত্র পাঁচ বছরে বেড়েছে ৫৭ হাজার ১১৩ কোটি টাকা।

শামস-উল ইসলাম বলেন, ব্যাংকটির লোকসানি শাখাও কমেছে। পাঁচ বছরে লোকসানি শাখা ৬০টি থেকে কমে ১৮টিতে নেমেছে। ২০১৬ সালে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ২৯ শতাংশ, যা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এসে ১৩ শতাংশে নেমেছে। পাঁচ বছরে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৬ শতাংশ।

শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘সবার থেকে এগিয়ে থাকার প্রত্যয় নিয়ে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। পদ্মা সেতুতে অগ্রণী ব্যাংক এককভাবে শতভাগ বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছে। এখন পর্যন্ত ১.৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে সামনে আরো যত বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন হবে তার পুরোটাই অগ্রণী ব্যাংক সরবরাহ করবে। আমাদের রপ্তানি এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্স থেকে আহরিত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে এককভাবেই পদ্মা সেতুতে ডলার সরবরাহ করেছি। ’

ব্যাংকের এমডি বলেন, ডলারসংকটের কারণে দেশের অনেক ব্যাংক জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির এলসি খুলতে চায়নি। তখন অগ্রণী ব্যাংক এগিয়ে এসে দেশের জ্বালানির ঘাটতি পূরণের জন্য জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অগ্রণী ব্যাংক ডলারের চাপের মধ্যে থেকেও স্বাভাবিক কাজ পরিচালনার পাশাপাশি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং পেট্রোবাংলার চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানি অব্যাহত রেখেছে। অগ্রণী ব্যাংক এগিয়ে আসার ফলেই দেশের জ্বালানি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।

শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের জন্য ১৫টি পাওয়ার প্লান্টে দুই হাজার ৩৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৭ হাজার ৭২৫ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছি। পায়রা বন্দরে নির্মাণাধীন এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্টে দুই হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরি প্রদান করা হয়েছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশের বৃহৎ শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প ও কৃষিতে অগ্রণী ব্যাংকের বিনিয়োগ সব ব্যাংকের চেয়ে বেশি। দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপে আমরা বিনিয়োগ করেছি। একসময় শিল্প গ্রুপগুলো সরকারি ব্যাংক এড়িয়ে চলত। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের অগ্রণী ব্যাংকে নিয়ে এসেছি। তারা এই ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করে দ্রুত সেবা পাচ্ছে। দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে বিনিয়োগ করে যাচ্ছি। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং একমাত্র ব্যাংক হিসেবে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অফশোর ব্যাংকিংয়ে বর্তমানে মোট বিনিয়োগ ১৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। ’

ব্যাংকটির এমডি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে বৃত্তির টাকা কোনো ধরনের কমিশন ছাড়াই আমরা দিয়েছি। শুধু মুনাফা নয়, দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের জন্য কাজ করছি। কভিড সংকট শুরু হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কাজ হারিয়ে আমাদের প্রবাসীদের অনেকে দেশে ফিরে আসে। তারা দেশে আসার পর তাদের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা ঘরে ফেরা কর্মসূচি দিই। এই কর্মসূচিতে ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য মাত্র ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। তিন বছরের জন্য ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে যখন সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনার ঘোষণা দেয় আমরা ১ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৩ শতাংশ দিয়েছি। ’

শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর যে দায়িত্বগুলো অর্পণ করেছেন সেগুলো যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে ব্যাংকে গুড গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে উন্নতি করেছি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে আমি অগ্রণী ব্যাংকে একটি ভালো পর্ষদ পেয়েছি, যারা প্রতিনিয়ত ব্যাংককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথোপযুক্ত দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক সমস্যাই আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ’

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.