“হামলার জন্য আমাকে কেন বেছে নিয়েছেন, জানা নেই”

লন্ডনের কেন্দ্রীয় মসজিদে ঢুকে আসরের নামাজের সময় মুয়াজ্জিনের ওপর ছুরি দিয়ে হামলা চালিয়েছে এক ব্যক্তি। হামলায় ৭০ বছর বয়সী ওই মুয়াজ্জিন আহত হয়েছেন, তবে তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে নেই। হামলার পরপরই অন্যান্য মুসুল্লিরা হামলাকারীকে পরাস্ত করে ফেলেন। তাকে হত্যাচেষ্টার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। এ খবর দিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

আর বিবিসি জানিয়েছে, হামলাকারীর বয়স ২৯ বছর। মসজিদের নিয়মিত মুসুল্লিরা তাকে চেনেন বলে জানিয়েছেন। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, ছুরিকাঘাতটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে না তারা।

তবে, হামলায় আহত ব্যক্তির জীবন ঝুঁকির মধ্যে নেই। এ ঘটনায় এক বিবৃতিতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত মুসুল্লিরা হামলাকারীকে আটকে রাখে। পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।

হামলার এক প্রত্যক্ষদর্শী মাগদি ইউসেফ বলেন, হামলাকারী মুয়াজ্জিনের বন্ধু ছিলেন। তাদের প্রায়ই একসঙ্গে দেখা যেতো। হামলাকারী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাকে দেখে ভালো মানুষই মনে হতো। বেশ শান্ত ও নীরব প্রকৃতির ছিলেন। আজ তিনি মসজিদে এসে মুয়াজ্জিনের পেছনে বসেন। এরপর একটি বড় ছুরি বের করে তার গলায় আঘাত করেন। আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি জানি না তিনি কেন এমনটি করলেন। তাকে দেখা বিপজ্জনক মনে হয়নি।

ফেইথ ফোরামস ফর লন্ডনের পরিচালক মোস্তফা ফিল্ড জানান, ওই হামলাকারী মসজিদের নিয়মিত মুসুল্লি ছিলেন। গত ছয় মাস ধরে তিনি মসজিদে আসতেন।

হামলার শিকার মুয়াজ্জিন রাফাত ম্যাগল্যান্ড বলেছেন, যখন তাকে আঘাত করা হয়েছে, তখন তার মনে হয়েছে, তিনি ইটের আঘাত পেয়েছেন। এরপরেই ফ্লোরে পড়ে যান।

সত্তর বছর বয়সী এই বৃদ্ধ বলেন, হামলাকারী পেছন থেকে আমার ওপর চড়াও হয়েছেন। মাথা ওপরে উঠানোর আগে মনে হয়েছে, আমি ইটের আঘাত পেয়েছি। খবর দ্য সানের।

তবে ওই হামলাকারী নিয়মিতই মসজিদে আসলেও তার চেহারায় কোনো আগ্রাসনের লক্ষণ দেখা যায়নি বলে জানালেন এই মুয়াজ্জিন। তিনি বলেন, হামলার জন্য ওই যুবক আমাকে কেন বেছে নিয়েছেন, তা আমার জানা নেই। এটা আমার দুভার্গ্যই বলা চলে।

এদিকে আইটিভি নিউজের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সত্তর বয়সী ওই মুয়াজ্জিন ছুরি হামলায় আহত হলেও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বের হওয়ার সময় তার মুখে হাসি লেগে আছে।

মসজিদের আয়াজ আহমেদ নামের এক উপদেষ্টা বলেন, মুসল্লিরা যদি ওই হামলকারী যুবককে সামাল না দিতেন, তবে এটা অবশ্যই প্রাণঘাতী হামলা হতো। পুলিশ আসার আগে মুসল্লিরা তাকে ধরে রাখেন। উপস্থিত সবার প্রতিক্রিয়া বেদনাদায়ক ও ভয়ঙ্কর। লোকজন চেঁচামেচি করছিলেন। এটা খুবই বিদ্বেষপূর্ণ হামলা ছিল।

তিনি বলেন, আমরা এমন এক সমাজে বসবাস করি, যেখানে প্রচুর ছুরি হামলার কথা শুনে আসছি। কিন্তু যখন এমন এক হামলা সরাসরি চোখের সামনেই ঘটতে দেখবেন, তখন আপনার অনুভূতি কেমন হবে? এই হত্যাচেষ্টার ঘটনা ছিল খুবই বেদনাদায়ক।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে মসজিদটি খোলা ছিল। মুসল্লিরা মূল হল থেকে সরে গেলেও রাতভর নামাজ অব্যাহত ছিল।

এক টুইটবার্তায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, লন্ডন কেন্দ্রীয় মসজিদে এমন একটি হামলার ঘটনার কথা শুনে আমি খুবই মর্মাহত। এবাদতের জায়গায় এমন ঘটনা সত্যিই ভয়ানক।

You might also like

Leave A Reply

Your email address will not be published.